হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী - হযরত ওসমান (রাঃ)-এর যুগে Part 20 - Islamic History Bangla

  হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী বই

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী - হযরত ওসমান (রাঃ)-এর যুগে

হযরত ওসমান (রাঃ)-এর যুগে

হযরত ওসমান (রাঃ)-এর বার বছর খেলাফত কালের ছয় বছর বেশ শান্তি-শৃংখলার মধ্যেই অতিবাহিক হয়েছিল। এরপর বিদ্রোহীগণ তার বিরুদ্ধে নানা প্রকার অভিযােগ আনয়ন করে তাঁর জীবন অতিষ্ঠ করে তােলে। হজ্জের মৌসুমে বিভিন্ন দেশ হতে জনসাধারণ হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট হযরত ওসমান মনােনীত প্রাদেশিক গভর্নরদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযােগ পেশ করত। হযরত আয়েশা খলিফাকে পরামর্শ দিলেন যেন প্রাদেশিক গভর্নরদের আহ্বান করে এই সকল অভিযােগ তদন্ত করেন।

তাঁর মতনুযায়ী তাঁদের সম্মেলন আহ্বান করা হল এবং হযরত আলী (রাঃ), হযরত যুবাইর, হযরত তালহা প্রমুখ বিজ্ঞা সাহাবাগণকে বিদ্রোহীদের অভিযােগ তদন্ত করবার জন্য নিযুক্ত করলেন। তদন্তে তাদের অভিযােগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হল। এবার হযরত আয়েশা (রাঃ) খলিফাকে বললেন, বিদ্রোহীদলকে সমূলে উৎখাত করা দরকার। কিন্তু কোমল প্রাণ হযরত ওসমান তা না করে বিদ্রোহীদের নেতা মুহাম্মদ বিন আবুবকরকে মিসরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করতে মনস্থ করলেন। কিন্তু হযরত আয়েশা এতে রাজি ছিলেন না।

পরবর্তীকালে এই বিদ্রোহী দলের হাতেই খলিফা হযরত ওসমানকে শাহাদত বরণ করতে হয়েছিল। হযরত ওসমানের শাহাদতের সময় হযরত আয়েশা (রাঃ) মক্কায় ছিলেন। তাঁর এই মর্মান্তিক শাহাদাদের সংবাদ। শুনে তিনি বলেছিলেন-“অত্যাচারিত অবস্থায় ওসমানকে হত্যা করা হয়েছে।”

তত্ত্বালে কয়েকজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী যুবক- আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর, মুহাম্মদ বন আবুবকর, মারওয়ান বিন হাকাম, মুহাম্মদ আবু হােযাইফা, সাঈদ ইবনুল আস খলিফার দরবারে তেমন সুযােগ-সুবিধা পাননি বলে তাঁর বিরুদ্ধাতায় লিপ্ত। (ণ। পরবর্তী পর্যায়ে উন্মিয়া বংশােদ্ভূত মারওয়ান ও সাঈদ উচ্চপদ লাভ করায়। অপরাপর যুবকগণ ক্ষেপে যান। একদা হযরত আশতার নখয়ী, ও মুহাম্মদ বিন।

আবুবরক হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে খলিফার বিরুদ্ধে। অনেক অভিযােগ পেশ করেন। তাঁরা শেষ পর্যন্ত এটা বলেন যে, হযরত ওসমানকে খলিফার পদ হতে অপসারণ করা হউক। এতে হযরত আয়েশা তাদের তিরস্কার করে বলেছিলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, ওসমান! কোন সময় তােমার হাতে খেলাফরেত বাগডাের আসলে তা তুমি স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করিও না।”

হযরত আয়েশা (রাঃ) স্বয়ং খলিফার একন কঠোর সমালােচক ছিলেন। কিন্তু ইরান, তুরান, মিসর, শাম, ইরাক, ইয়ামন প্রদেশ হতে লােকজন এসে হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট খলিফার বিরুদ্ধে অভিযােগ করলে তিনি অতিশয় ধৈর্য সহকারে শ্রবণ করতেন এবং আশ্বাস বাণী দ্বারা তাহাদিগকে বিদায়। দিতেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল যেন মুসলমানদের মধ্যে কোন প্রকার বিশৃংখলার সৃষ্টি হতে না পারে।

হযরত ওসমানের বিরুদ্ধে তুমুল সমালােচনা চলবার কালে জনৈক ইয়াহুদী

ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করল। ইসলাম গহণ করেই সে ব্যাপকভাবে কুফা, মিসর ও বসরা সফল করে এবং বিভিন্ন সৈন্য ঘাটিতে প্রবেশ করে তাদের মধ্যে বিদ্রোহের বীজ ছড়িয়ে থাকে।এই সময় রােম ও আফ্রিকায় যুদ্ধ চলতেছিল। মুহম্মদ বিন আবুবকর এবং মুহম্মদ বিন আবু হুযাইফা প্রকাশ্যে যুদ্ধ করবার জন্য সৈন্যদলে যােগদান করেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সৈন্যদলে বিশৃংখরা সৃষ্টি করা।

ইতােমধ্যে তারা উবয়ে মিসরের গভর্নর আবদুল্লাহ ইবনে আবীসারাহ এবং খলিফা হযরত ওসমান (রাঃ)-এর প্রকাশ্য সমালােচনা করতে লাগলেন।
হজ্জের মওসুম আগত। মিসর, বসরা ও কুফা হতে হাজার হাজার লােক হজ্জের অজুহাতে মক্কার দিকে রওয়ানা হল। মদীনা অদূরে তারা তাবু ফেলল। হযরত আলী এবং কতিপয় বিশিষ্ট সাহাবা তাদেগকে নানাভাবে সান্ত্বনা প্রদান করে স্ব স্ব দেশে ফেরৎ পাঠান।

তাদের সুনরােধে তারা স্বদেশের পথে যাত্রা করলেও কিছুদূর যাওয়ার পর তারা মিসরের গভর্নরকে লেখা একখানা চিঠি পুনঃ ফিরিয়ে আসে। তাতে লেখা ছিল বিদ্রোহীগণ মিসর পৌছলেই হত্যা করে। ফেলবে। তাদের ধারনা ছিল যে, পত্র মারওয়ান ব্যতীত অরা কেহনই লিৰ পারে না। তাই তারা খলিফার নিকট দাবী জানাল, হয় মারওয়ানকে আমার

সমর্পণ করুন, অন্যথায় আপনি খেলাফত ত্যাগ করুন। হযরত ওসমান কথায় গুরুত্ব দিলেন না।
হজ্জের সময় নিকটবর্তী। হযরত আয়েশা (রাঃ) কাবা যিয়ারতে যাবেন। নি তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই মুহাম্মদকে এইসব গােলযােগ বন্ধ করে তার সাথে কা যাবার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু মুহামমইবন আবুবকর তার কতা মানলেন না। পরীদল হযরত ওসমান (রাঃ)-এর আবসস্থল তিন সপ্তাহ অবরােধ করে রাখল। এবং বিপ্লবীদের হাতেই পবিত্র শহরে, নিষিদ্ধ মাসে,

 হযরত ওসমান (রাঃ)-কে শাহাদত বরণ করতে হল

কোন কোন ঐতিহাসিক হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষবশতঃ বলে যে, হযরত ওসমান (রাঃ)-এর হত্যার ঘটনার সহিত তিনি জড়িত। কিন্তু তা। একটি ভ্রান্ত প্রচারণা। কেননা হযরত ওসমান (রাঃ)-এর মর্মান্তিক হত্যার সংবাদ পেয়ে তিনি বলেছিলেন- “অত্যাচারিত অবস্থায় ওসমান শাহাদত বরণ |
 
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “খােদার শপথ! ওসমান লাঞ্ছিত হউক এটা আমি কোন সময়ই পছন্দ করি নাই। যদি করে থাকে তবে আল্লাহ যেন আমাকে অমানিত করেন। আমি শপশ করে বলতে পারি যে, আমি কখনও চাই নাই, ওসমান নিহত হউক। যদি আমি এইরূপ আশা পােষণ করে থাকি তবে আমি যেন হত্যা হই |

একাদ আশতার নখয়ী হযরত আয়েশাকে প্রশ্ন করলেন, “হযরত ওসমানের হত্যার ব্যাপারে আপনি জানেন?” এই প্রশ্ন শুনে আয়েশা (রাঃ) বলে উঠলেন, ‘মা’আজাল্লাহ (আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি), কেন আমি ইমামুল মুসলিমীনকে হত্যা করবার আদেশ দিব?”


আমাদের কিছু কথা

বাংলায় লিখতে গিয়ে যদি কোনো ধরনের ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

এবং যদি আপনাদের কোন ধরনের সাজেশন থাকে তাহলে অবশ্য আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন

আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ

আমাদের এই পোস্টে ভিজিট করার জন্য

এবং যদি ভালো লাগে এই পোস্টটি তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

Post a Comment

0 Comments