হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী - হযরত ওমর (রাঃ)-এর যুগে Part 19 - Islamic Story Bangla

 হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী বই

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী, হযরত ওমর (রাঃ)-এর যুগে

হযরত ওমর (রাঃ)-এর যুগে  

                                                                                                                                                                                                                                                                                         ত্রয়ােদশ হিজরীর ২৩ শে জমাদিউস সানী রােজ বুধবার হযরত আবুবকর। বাঃ)-এর ওয়াছিয়ত মােতাবেক হযরত ওমর মুসলিম জগতের দ্বিতীয় খলিফা। নিযুক্ত হন। তার খেলাফতের যুগ শ্রেষ্ঠ যুগ বলে স্বীকৃত। তিনি যখন খলিফা পদে নিযুক্ত হন সে সময় মুসলিম রাষ্ট্রগুলাে ইরান ও রােম সাম্রাজ্যের সাথে আপন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সংগ্রামে লিপ্ত।

এই সময়ে হযরত ওমর (রাঃ)-এর মত সাহসী ব্যক্তি না হইলে মুসলমানদের অবস্থা কি হত তা চিন্তার বিষয়। কেবল বাহিরের শত্রুই নহে, মুসলমানদের মধ্যে ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার যে প্রবণতা দেকা দিয়েছিল তা কঠোর হস্তে দমনে যােগ্য ব্যক্তি ওমরকে খলিফা মনােনীত করে আবুবরক বিচক্ষণতারই পরিচয় দিয়েছিলেন।                                                                                                                      

হযরত ওমর (রাঃ) খলিফা পদে নিযুক্ত হওয়ার অল্পকাল পরেই বিখ্যাত

সেনাপতি হযরত খালেদ বিন ওয়ালীদকে বরখাস্ত করেন। এতে হযরত আয়েশা হযরত ওমরকে সতর্ক করে এই সাবধান বাণী প্রেরণ করলেন যে, খালেদ বিন ওয়ালীদকে সেনাপতি পদ হতে বরখাস্থ করা হলেও যেন তাকে সৈন্যবাহিনী হতে বের করা না হয়।

কারণ তাতে সৈন্যদলে বিশৃংখলা দেখা দিবে। হযরত ওমর (রাঃ) তাঁর এই আদেশ পালন করলেন। | হযরত ওমর (রাঃ) উম্মুল মু'মিনীনগণকে বার্ষিক বার হাজার দেরহাম বৃত্তি দিতেন।

কোন কোন ইতিহাসবেত্তা বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আয়েশাকে বার হাজার এবং অপর সকলকে দশ হাজার বার্ষিক ভাতা দান করতেন। ইহার কারণ। হিসেবে হযরত ওমর (রাঃ) বলেছিলেন, হযরত আয়েশা (রাঃ) নবী করীম (সাঃ)-এর অতিশয় প্রিয় ছিলেন।

হযরত ওমর (রাঃ) সব সময়ই এই খেয়াল রাখতেন

যে ভাল ভাল জিনিস-পত্র হযরত আয়েশার খেদমতে প্রেরিত হয়। ইরাক বিজয়ের পর গনিমতের সহিত একটা কৌটা খলিফার দরবারে আসল। মতির কৌটা দেখিয়ে খলিফা একটু ভাবনায় পড়লেন। কারণ এটা মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করা সম্ভব। ছিল না। তখন তিনি উহা হযরত আয়েশাকে দান করে নিশ্চিন্ত হলেন। হযরত আয়েশা হযরত ওমর (রাঃ)-এর এই বদান্যতায় মন্তব্য করেছিলেন, নবী করীম।

(সাঃ)-এর ওফাতের পর ওমর আমার প্রতি অনেক অনুগ্রহ করেছিলেন। ত মাবুদ। তার এসব অনুগ্রহণের জন্য আমাকে আর জীবিত রেখাে না।”
হযরত আয়েশা (রাঃ) খলিফাগণের শানবকালে যে কোন সমস্যা দেখা দিলে নীরব না থেকে প্রয়ােজনে নির্ভুল ও সঠিক পরামর্শ দ্বারা সমস্যার সমাধান করতে। চেষ্টা করতেন। খলিফাগণ তাঁর মহামূল্যবান পরামর্শ পালনে বিন্দুমাত্র শৈথিল্য। প্রকাশ করতেন না।

অষ্টাদশ হিজরীতে হযরত আমর ইবনুল আস খলিফার

নির্দেশক্রমে চারি হাজার সৈন্য নিয়ে মিসর আক্রমণ করেন। দীর্ঘ এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল। কিন্তু মিরস পদানত হল না। হযরত আয়েশা এই। পরিস্থিতেত জুবাইরকে সেনাপতি করে মিসরে পাঠাতে খলিফাকে পরামর্শ। দিলেন। খলিফা তার আদেশ পালন করলেন। হযরত জুবাইর (রাঃ) মিসর। পৌছিয়ে একাধারে সাত মাস শত্রু শিবির অবরােধ করে রাখেন।

একদিন সুযােগমত তিনি শত্রু শিবিরের প্রাচীরে আরােহণ করে বজ্র নিনাদে নারায়ে | তাকবীর’ দ্বারা শত্রুর হৃদয় কাঁপিয়ে দিলেন। ফলে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করল। হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর এই পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা না । নিলে ঐ সময় মিসর মুসলমানদের হস্তগত হত কিনা বলা যায় না।

হযরত ওমর (রাঃ) সর্বদা এ আশা পােষণ করতেন

যে, মৃত্যুর পর তাঁর চিরশয্যা যেন রাসূলুল্লাহর পদতলে রচিত হয়। কিন্তু হযরত আয়েশার সমীপে একটি কারণে তা তিনি প্রকাশ করেন নাই। তিনি জানতেন, হযরত আয়েশা কোন গাইর মুহাররম ব্যক্তির কবর জিয়ারতের যেতে পর্দা করতেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং হযরত আবুবকরের পার্শ্বে তাহার কবর হলে তার যাতায়াতে বিঘ্নের। সষ্টি করবে। যদিও শরীয়তের দৃষ্টিতে গাইর-মুহাররমের কবরের নিকট যেতে।

পার দরকার করে না, তবু হযরত আয়েশার অভ্যাসের পরিপন্থী বিবেচনা করে তার আকাঙ্ক্ষার কতা তপার নিকট ব্যক্ত করেন নাই। অন্তিম সময়ে তিনি পুত্র আবদল্লাহ (রাঃ)-কে তার মনােবাসনা জানিয়ে হযরত আয়েশার তরল। করেন। হযরত ওমরের এই আকাঙ্ক্ষার কথা শুনে হযরত আয়েশা (রাঃ)

বললেন, “আমার একান্ত ইচ্ছা ছিল স্বামী এবং পিতার পদত== মা
কিন্ত ওমরের খাতিরে আমার সেই বাসনা ত্যাগ করলাম।” হযরত আয়েশার (রাঃ) অনুমতি পেয়ে তিনি আনন্দাশ্রু বিসর্জন করলেন। তিনি পুত্রকে বললেন, “আমার লাশ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আস্তানায় নিয়ে পনঃ।যশা


হযরত আয়েশার অনুমতি চাবে। যদি অনুমতি পাওয়া যায় তবে তথায় আমাকে ফন করিও, নতুবা অন্যত্র দাফন করবে।” হযরত আয়েশা দ্বিতীয় দফা অনুমতি লাভের পর হযরত ওমরকে হুযুর (সাঃ)-এর পার্শ্বে দাফন করা হয়। তাকে রওজা মুবারকে সমাহিক করবার মাধ্যমে হযরত আয়েশার স্বপ্ন তিনটি চন্দ্র তার ঘরে আসার তাৎপর্য পূর্ণ হয়।

Post a Comment

11 Comments

Please Don't Send Any Spam Link