হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী - হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর বৈশিষ্ট্য, Part 17 - Islamic History Bangla

 হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী বই

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী, হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর বৈশিষ্ট্য

হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর বৈশিষ্ট্য।

জঙ্গে জামালের করুণ দৃশ্যের অবসানের পর হযরত আয়েশা (রাঃ) বসরা হতে হজ্জব্রত পালন করবার জন্য মক্কা গমন করেন। হজ্জপর্ব সমাপন করে তিনি মদীনায় চলে আসেন এবং এরপর হতে একজন জ্ঞান সাধক হিসেবেই তার। অবশিষ্ট জীবন কাটান। যদিও তিনি এ সময় সরাসরিভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ। করেন নাই, কিন্তু অন্যায়ের ব্যাপারে তিনি ছিলেন আপােষহীন।

দুনিয়ার বহু নারী আপন আপন গুণ-বৈশিষ্ট্যে শ্রেষ্ঠস্থান অধিকার করে রয়েছেন। সাধারণতঃ বিশেষ একটি গুণই একজন নারীকে এই শ্রেষ্ঠত্বের আসনে। প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একজনের মধ্যে বহুগুণের সমাবেশ দেখা যায় না। একমাত্র।

হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর মধ্যেই আমরা দেখতে পাই মানবীয় বহুগুণের। সমাবেশ। তিনি অনন্য সুন্দরী, তীক্ষ্ণ মেধাশক্তিসম্পন্না, বিদূষী, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শী, গৃহকর্মে সুনিপুণা, শিক্ষয়িত্রী, সত্যের সাধিকা, অগ্নিবর্ষী বাগীশ, সচ্চরিতবতী, মধুর আলাপী। এক কথায় মানবীয় চরিত্রের সকল গুণই তাঁর মধ্যে ছিল বিরাজমান।
হযরত আয়েশা (রাঃ)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মহিষীগণের মধ্যে ছিলেন বয়সে সর্ব কনিষ্ঠ

বহু সংখ্যক সপত্নী বেষ্টিতা থেকেও তিনি নারীত্বের যে চরম শিখরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তা নারী জাতির জন্য গৌরবের বিষয়। মুনাফিক ও হিংসুকগণ তাঁর প্রতি যে জঘন্য অপবাদ দিয়েছেন তাতে তিনি একেবারে মুষড়িয়ে পড়েন। অপরদিকে তিনি পরম ও পরম আশ্রয়দাতা আল্লাহর।

উপর নির্ভর করে সামাজিক ও পার্থিব সকল প্রকার ভয়ভীতির বাহেরে থেকে ধৈর্যের যে পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছিলেন তা একমাত্র হযরত আয়েশা (রাঃ) এর মত পূতঃপবিত্র সাধ্বী রমণীর দ্বারাই সম্ভব ছিল।

বছরের অধিকাংশ সময়ই রােযা রাখতেন এবং রাত্রি বেলা আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে ডুবিয়ে রেখাই ছিল তাঁর। তৃপ্তি। ফকীর মিসকীনকে কিছু দান করতে পারলেই তিনি শান্তি পেতেন। তাঁর হাতে লক্ষ টাকা আসলেও তিনি অল্পসময়েই তা গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন।

কোন সময় কোন ফকীর এসে কিছু প্রার্থনা করলেই ঘরে একটিমাত্র খেজুর থাকলে সেটাই তিনি তার হাতে তুলে দিতেন। আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে এমনভাবে মগ্ন রেখেও তিনি পরকালের চিন্তায় কেঁদে কাটাতেন।

কোরআন ও হাদীসের অতি সুন্দর সুসংহত ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে তিনি মুসলিম

সমাজের জন্য যে অবদান রেখে গিয়েছেন তা অতুলনীয়। শরীয়তের বিধান রচনার ক্ষেত্রেও তাঁর প্রচেষ্টা কোন অংশেই কম নহে। এমন বৈচিত্র্যময় মহৎ গুণের অধিকারিণী হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর সহিত অপর কোন নারীর তুলনা। চলে না; তার তুলনা শুধু তিনিই।

বহু গুণে গুণান্বিত হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর সম্মানে আল্লাহ্ রাব্বল। আলামীন তায়াম্মুমের বিধান সকলের মঙ্গলার্থে প্রদান করেছেন।
ইন্তেকাল। হযরত আয়েশা (রাঃ) ধর্মীয় বিধিবিধানের সমাধাসহ বিভিন্ন সমস্যার। সমাধানে তিনি ছিলেন অনন্যা। জীবনের সায়ান্নে এসে হযরত আয়েশা (রাঃ)

জ্ঞান প্রচারে আত্মনিয়ােগ করেন। শিক্ষকতায় রতাবস্থায় ৫৮ সনের রমযান মাসে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে তাকে দেখবার জন্য লােক ভিড়। করতে লাগল। তার অবস্থা জানতে চাইলে তিনি শুধু ভাল আছেন বলে উত্তর দিতেন।

একবার হযরত ইবনে আব্বাস তার সাথে সাক্ষাতের জন্য অনুমতি প্রার্থনা

করেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে অনুমতি প্রদান করলেন। তিনি তাঁর খেদমতে উপস্থিত হয়েই হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর প্রশংসা আরম্ভ করে বলেন- উম্মুল মু'মিনীন! আপনি ছিলেন হুযুর (সাঃ)-এর পরম প্রিয়, আপনার পিতার আদরের, ইন্তেকালের পরই আপনি তাঁদের সাথে মিলিত হবার সৌভাগ্য লাভ করবেন।

আপনার উছিলায়ই তাইয়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। তার মুখে এই সকল প্রশংসাসূচক বাক্য শুনে তিনি বিরক্তির সাথে বললেন- ইবনে আব্বাস! ক্ষান্ত হও। প্রশংসা শুনতে শুনতে আমার কান ঝালাপালা হয়ে গিয়েছে।

 এসব শােনার চেয়ে আমার জন্ম না হওয়াই ভাল ছিল

এর পরপরই তিনি বলেন, “আমার মৃত্যুর পর আমাকে তােমরা হুযুর (সাঃ)-এর রওজায় দাফন করবে না। জান্নাতুল বাকীতে দাফন করবে। রাতের অন্ধকারেই দাফনের কাজ সুসম্পন্ন করবে।” তার এই অন্তিম অছিয়ত শুনে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন- আপনার পিতা আবুবরক (রাঃ) এবং স্বামী রাসূলে করীম (সাঃ)-এর পার্শ্বে দাফন করলে উত্তমম হত।” তিনি বললেন- তা হলে পূর্বের সকল সৎকাজ বাদ দিয়ে নূতনভাবে আমল আরম্ভ করতে হবে।

কেননা, হুযুর (সাঃ)-এর ইন্তেকারের পর আমি দাওয়াতে ইছলাহের জন্য যে চেষ্টা চালিয়েছিলাম তা সম্ভবতঃ আমার জন্য উচিত হয় নাই। কাজেই আমি কোন ভরসায় আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সম্মানিত দুই সহচরের পার্শ্বে সমাহিত হবার আশা করতে পারি? তােমরা আমাকে হুযুর (সাঃ)-এর পত্নীগণের পাশে জান্নাতুল বাকীতেই দাফন করিও।


৬৭৮ ঈষায়ী ১৩ই জুন ৫৮ হিজরী সনের ৭ই রমজান শনিবার দিবাগত মাত্র তারাবীর নামায সমাধা করে আপন শয্যায় শায়িত হলেন। এই শায়িত। অবস্থায়ই তিনি এই নশ্বর জগতের মােহ কাটিয়ে চির নিদ্রায় ঢলে পড়েন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।

মৃত্যু সঙবাদ ছড়িয়ে পড়বার সাথে সাথে চারদিক হতে লােক এসে জমায়েত হতে লাগল। আনসার ও মহাজির মহিলাগণ এসে জড় হলেন।

হযরত আয়েশা (রাঃ) ইন্তেকালে মদীনায় এক নিদারুণ শােকের ছাড়া নেমে আসল

হয়রত, উম্মে সালমা শােকাতুর লােকদের লক্ষ্য করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে উঠলেন। হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর জন্য বেহেশত ওয়াজিব। কারণ তিনি ছিলেন নবী। সহধর্মিণীদের মধ্যে অধিক গুণবতী ও হুযুর (সাঃ)-এর প্রিয়তম। আল্লাহর রহমত তার উপর বর্ষিত হউক। হুযুর (সাঃ)-এর নিকট হযরত আবুবকরের পরেই সর্বাপেক্ষা প্রিয় ছিলেন হযরত আয়েশা (রাঃ)।

জান্নাতুল বাকীতে হযরত আয়েশা (রাঃ) অছিয়ত অনুযায়ী সামাহিত করা হয়। মদীনার অস্থায়ী গভর্নর হযরত আবু হুরাইরাহ তার জানাযার নামায পড়ান। নামাযে জানাযায় তার নিকটতম আপনজন কাসেম ইবেন মােহাম্মাদ ইবনে আবুবকর, আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান ইবেন আবুবকর, আবদুল্লাহ ইবনে আতীক, উরওয়া ইবনে জুবায়ের, আরও অনেক ভ্রাতুস্পুত্র ও ভাগিনা উপস্থিত ছিলেন।

তাঁরাই তাঁকে কবরে স্থাপন করেন। তাঁকে দাফন করবার পর মদীনাবাসী উপলব্ধি করল, নবী গৃহের এক উজ্জ্বল তারকা আজ তাদের চোখের অন্তরালে চলে গেল।

আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ)-কে কুফা ও মিসরবাসীরা জিজ্ঞাসা করেছিল

হযরত আয়েশা (রাঃ)-র ইন্তেকালের খরব শুনে মদীনাবাসী কি প্রকার শােকাভিভূত হয়েছিল? তিনি বলেছিলেন, তিনি যাদের মা ছিলেন তারা সকলেই শােকাতুর হয়েছিলেন।
মাশরুর তাবেয়ী বর্ণনা করেছেন, মানব পূজার ভয় না থাকলে আমি হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর শােকের মজলিস করতাম।

হযরত আয়েশা (রাঃ) ইন্তেকালের পর মদীনায় যেন এক উজ্জ্বল জ্যোতি নির্বাপিত হলাে

ঘরে ঘরে হাহাকরের এক করুণ মূর্ত আর্তনাদ বহমান হলাে

হযরত আয়েশা (রাঃ) ইন্তেকালের সময় যে সামান্য সম্পত্তি রেখে যান তার। মধ্যে একখন্ড অনাবাদী জমি ছিল। উহা তার বােন আসমার অংশে পড়ে।

আসমা উহা একলক্ষ দেরহারেম বিনিময়ে বিক্রি করে সমুদয় দেরহামই গরীবের। মধ্যে বণ্টন করে দেন।
এই শােকে মুসলিম বিশ্বের মুসলিম জগতের শােক এবং বেদনার ঝড় বয়ে চলেছিল তা সকলকে রীতিমত শােকাভিভূত করে তুলছে।


আমাদের কিছু কথা

বাংলায় লিখতে গিয়ে যদি কোনো ধরনের ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

এবং যদি আপনাদের কোন ধরনের সাজেশন থাকে তাহলে অবশ্য আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন

আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ

আমাদের এই পোস্টে ভিজিট করার জন্য

এবং যদি ভালো লাগে এই পোস্টটি তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

Post a Comment

0 Comments