আয়েশা রাঃ এর জীবন কাহিনী দিক নির্দেশনা - Islamic History Bangla Part 5

 আয়েশা রাঃ এর জীবনী বই

আয়েশা রাঃ এর জীবনী বই

দিক নির্দেশনা।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক ঘােষণা করেছেন ।

উচ্চারণ ও ওয়া মা খালাতুল জ্বিন্না ওয়াল ইনছা ইল্লা লিইয়াবুদুন।
অর্থাৎ- আমি জ্বিন এবং ইনসানকে শুধু কেবল আমার ইবাদত ও পায়রবীর জন্যই সৃষ্টি করেছি। ইবাদত-বন্দেগী মানুষের উপর যেমন ফরজ। তেমনি জ্বিন সম্প্রদায়ের উপরেও ফরজ। এই উভয় সম্প্রদায়ের জন্য একই হুকুম-আহকাম জারি রয়েছে। এই প্রসঙ্গে ইবাদতের শ্রেণীভেদ সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়ােজন।

ইবাদতকে মােটামুটি দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। প্রথমতঃ ইবাদতে বদনী অর্থাৎ শারীরিক ইবাদত; দ্বিতীয়তঃ ইবাদতে মালী অর্থাৎ ধন-সম্পদ দ্বারা সংঘটিত ইবাদত। এই উভয়বিধ ইবাদতেরই আবার কয়েকটি শ্রেণী রয়েছে। তবে ইবাদত-বন্দেগী আরম্ভ করার পূর্বে মানুষের জন্য যা একান্ত দরকার, তা হচ্ছে অন্তরের পবিত্রতা অর্জন করা

যে কোন ইবাদত সম্পাদনের জন্য অন্তরকে নির্মল ও মুক্ত রাখতে হবে। অন্তরের পবিত্রতাহীন ইবাদত আল্লাহর দরবারে। শরীয়তের বিধান অনুসারে কবুল হয় না।

কারণ অপবিত্র অন্তর মানুষকে গােমরাহীর দিকে প্রভাবিত করে এবং আল্লাহর নাফরমানীর প্রতি উৎসাহিত করে। আর এমন সব কাজের অনুপ্রেরণা প্রদান করে যা আল্লাহর রেজামন্দি লাভের পথে বিশেষভাবে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। ফলে এই ইবাদতের দ্বারা আল্লাহর রেজামন্দি লাভ করা যায় না। 

কুরআনে আছে- “যে নামাজী স্বীয় নামাজে অলসতা করে, তার ধ্বংস অনিবার্য। কারণ, যখন সে ব্যক্তি নামাজে দণ্ডায়মান হয়, তখন সে অলসভাবে লােক দেখানাে ভাবে ইবাদত করে ও।প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর জিকির করে না। তার অন্তর থাকে দ্বিধা-বিভক্ত।

অন্তরে। আল্লাহর প্রতি একাগ্রতা প্রকাশ পায় না।

ইবাদতের সময় খাহেশে নফসানী সর্বোতভাবে পরিত্যাগ করতে হবে। দুনিয়ার প্রত্যাশা, যশ-গৌরবের প্রত্যাশা, ধন-সম্পদের আকাঙ্ক্ষা, আত্মম্ভরিতা ও

আত্মগরীমাকে বিসর্জন দিতে না পারলে মানুষ স্বীয় প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে পড়ে। যারা প্রবৃত্তির অনুসারী হয়, পরিণামে তারা শয়তানের প্ররােচনায় পথভ্রষ্ট হয়ে যায়। আর পথভ্রষ্ট লােকের পক্ষে নিজের ইবাদত দ্বারা আল্লাহর রহমতের আশা করা বাতুলতা মাত্র। ইবাদত মূলতঃ পরকালে সুখ-শান্তির নিমিত্ত হয়ে থাকে। সুতরাং পরকালের জন্য যে ইবাদত করা দরকার, তা দুনিয়া লাভের জন্য করতে নেই।

আর যে ব্যক্তি দুনিয়া লাভের জন্য পরকালের কাজে লিপ্ত হয়, তার সেই কাজ কিছুতেই গ্রহণযােগ্য হয় না, পরকালে ইহার প্রতিদান কিছুই সে পাবে না। মানুষের উচিত আখেরাতের নিয়তে দুনিয়াকে ত্যাগ করা।খাহেশে নফসানী বিবর্জিত অন্তরে পাঁচটি গুণ সর্বদাই পরিলক্ষিত হয়।

প্রথমতঃ, ইহা দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হতে নিষেধ করে এবং দুনিয়া বর্জন করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। দ্বিতীয়তঃ, রিয়া ও অহঙ্কার হতে বিরত রাখে এবং ইখলাস ও একাগ্রতার প্রতি অনুপ্রাণিত করে। তৃতীয়তঃ, অহঙ্কার ও খােদপরস্তি। হতে দূরে রাখে এবং নসীহত ও উপদেশ দানে নিয়ােজিত রাখে। চতুর্থতঃ, অশিক্ষা ও অন্ধকার হতে সরিয়ে রাখে এবং জ্ঞানের আলাে ও বিশুদ্ধতার দিকে প্রভাবিত করে।

পঞ্চমতঃ, মিথ্যা কথা বলা হতে রসনাকে পরিত্র রাখে, অন্তরকে কপটতামুক্ত রাখে, রিয়া হতে ইবাদতকে নিরাপদে রাখে, অশােভন বস্তু দেখা। হতে দৃষ্টিকে সংযত রাখে, চোখের অস্থিরতা ও অন্তরের গােপন বাসনাকে আল্লাহর মর্জির উপর সােপর্দ করে।

হযরত শাদ্দান ইবনে আউস (রাঃ) বলেন, আমি একদা হুজুরের (সাঃ) খেদমতে উপস্থিত হয়ে তার চেহারা মােবারকের প্রতি লক্ষ্য করে বিস্মিত হয়ে। গেলাম। আমি আরজ করলাম-হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আপনার চেহারা আজএত মলিন ও বিষাদময় কেন? নবী পাক (সাঃ) উত্তর করলেন, আমার মৃত্যুর | পর আমার উম্মতগণ শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়বে কি না, এই আশঙ্কায় আমার মন
ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার।

তিরােধানের পর উম্মতে মুহাম্মদী কি শিরকে পরিলিপ্ত হবে?

উত্তর করলেনতারা না চন্দ্র-সূর্যের অর্চনা করবে, না দেব-দেবীর উপাসনা করবে; কিন্তু তারা। আমলের ক্ষেত্রে রিয়াকারী হবে। আর প্রকৃত অর্থে রিয়াকারীই মুশরিক। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন ঃ যারা স্বীয় সৃষ্টিকর্তার দর্শনাকাঙ্ক্ষী তাদের উচিত নেক। আমল করা এবং আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে কাকেও শরীক অর্থাৎ রিয়া না করা।

হযরত (সাঃ) আরাে বলেছেন 

কিয়ামতের দিন কিছু সংখ্যক সীলমােহর যুক্ত আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হবে। তখন আল্লাহ। পাক ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিবেন- তােমরা এই আমলনামাগুলাে ফেলে দাও এবং ভালােভাবে নিরীক্ষণ কর। ফেরেশতাগণ আরজ করবেন, ইয়া বারে ইলাহী! আপনার ইজ্জত-সম্মান ও প্রতিপত্তির শপথ, আমরা তাে নেক আমল ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। আল্লাহ বলবেন, তা ঠিক। তবে তাদের এই ইবাদত আমি ছাড়া অন্য কারাে জন্য ছিল। 

আমি এই ইবাদত গ্রহণ করতে পারি না। বস্ততঃ যে ইবাদত কেবল আমার রেজামন্দির জন্যই করা হয় শুধু তাই গ্রহণ করি।
প্ৰকৃতক্ষে বান্দা এবং আল্লাহর মধ্যে অবিচ্ছেদ্য যােগসূত্র স্থাপিত হওয়াই মূল সফলতা। কেননা, যে বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তু প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়, সে হচ্ছে অতিশয় নিকৃষ্ট বান্দা।

সে আল্লাহর রহমত ও করুণা হতে বহু দূরে অবস্থান করে। যদি কেউ এই মনে করে যে, কোন লােক বা সত্তার হাতে ভালাে-মন্দ করার শক্তি আছে এবং তাকে সন্তুষ্ট করার নিয়তে পরিশ্রম করতে থাকে, তবে তার ধর্ম বিনষ্ট হয়ে যায় এবং আল্লাহর নিয়ামত হতে সে চির বঞ্চিত হয়।

তার এই আমলের ফলে তার মধ্যে এবং আল্লাহর রেজামন্দি লাভের মধ্যে অতি সত্বরই প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। প্রকাশ্যভাবে যদিও সে আল্লাহর ইবাদতে দণ্ডায়মান হয়, কিন্তু সেই ইবাদত অন্য কারাে জন্য হয়ে যায়। এবং আল্লাহর ইবাদতের স্বাদ ও গন্ধ কিছুই সে অনুভব করতে পারে না। আর তারা হবে ফাসেক সম্প্রদায়ভুক্ত। ফাসেকদের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। এই প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ঘােষণা করা হয়েছে ?

উচ্চারণঃ ইন্নাল মুনাফিকীনা ফিদ্দারকিল আছফালি মিনান্নার।
অর্থাৎ- অবশ্যই মুনাফিক সম্প্রদায় দোজখের নিম্নতর স্তরে অবস্থান করবে। দোজখ এমনিতেই ভয়ংকর আজাবের স্থান। তদুপরি ইহার তলদেশ কত যে আজাবে পরিপূর্ণ তা সহজেই অনুমান করা যায়।
ইবাদতে, চিন্তায়, কাজে, কথায় পুরােপুরি ইখলাস থাকতে হবে ও। সর্বোতভাবে আল্লাহর উপর আত্মসমর্পণ করতে হবে। একাগ্রতা ও নিবিষ্ট চিত্ততা। ইবাদত কবুলের প্রথম সােপান।।

এছাড়া ইবাদতে বদনী ও ইবাদতে মালীর শ্রেণীবিন্যাস সম্বন্ধেও অবগত হওয়া দরকার। এই দ্বিবিধ ইবাদতকে কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়; যথা
(১) ফরজ, (২) ওয়াজিব, (৩) সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, (৪) সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ এবং (৫) নফল বা মুস্তাহাব। যে সকল কাজ বা অনুষ্ঠান শরীয়তের দৃষ্টিতে মােবাহ বলে স্বীকৃত হয়েছে, সেগুলােকেও নফলেরই অন্তর্ভুক্ত ধরা যায় ।।

১। ফরজ ও ফরজ ইবাদত বান্দাদের জন্য অবশ্য করণীয়। কিছুতেই ইহার অন্যথা হওয়ার উপায় নেই। শরীয়তের অকাট্য দলিল দ্বারা ইহা প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ পাক কঠোর নির্দেশ দ্বারা ইহা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। ফরজ পালন না। করলে কঠিন শাস্তি ভােগ করতে হবে।
ফরজ ইবাদত দুই শ্রেণীতে বিভক্ত।
 

প্র্রথমতঃ ফরজে আইন, দ্বিতীয়তঃ ফরজে কেফায়া। ফরজে আইন সকলের জন্য অবশ্য পালনীয়। কিন্তু ফরজে কেফায়া সকলের পক্ষ থেকে কতিপয় লােক আদায় করলে সকলের আদায় হয়ে। যায়।
যেমন জানাযার নামাজ।

২। ওয়াজিব ঃ ওয়াজিব আদায় করাও অবশ্য কর্তব্য। শরীয়তের দলিলে জন্নী দ্বারা ইহা স্থিরীকৃত। ওয়াজিব আদায় না করলেও কঠোর আজাব হবে। ইহা ফরজের অনুরূপ। ফরজের যে হুকুম, ওয়াজিবের জন্য সেই হুকুমই নির্ধারিত রয়েছে। ওয়াজিব আদায় করাও একান্ত অপরিহার্য।

৩। সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ ও হুজুর পাকের নির্দেশ ও ক্রিয়া-কর্ম যা উম্মতের। জন্য পালনীয় এবং যা আদায় না করলে গুনাহগার হতে হয়, ইহাকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ বলে। মূলতঃ এগুলাে বাধ্যতামূলক সুন্নাত।

৪। সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ ঃ আঁ হযরত (সাঃ)-এর নির্দেশ ও ক্রিয়া-কর্ম যা উম্মতের জন্য অবশ্য পালনীয় নয় এবং সেগুলাে পালন না করলে গুনাহগার হতে হয় না এবং যেগুলাে বাধ্যতামূলক নয়, এগুলােকে সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ বলা হয়। যেমন আসরের নামাজের চার রাকআত সুন্নাত এবং ইশার। নামাজের চার রাকআত সুন্নাত।

৫। নফল বা মুস্তাহাব ও ইহা পালন করলে যথেষ্ট সওয়াব হয়, কিন্তু পালন। করলে কোন প্রকার গুনাহ হয় না বা আজাবের ভাগী হয় না। এই প্রকার। ইবাদতগুলাে সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহর অনুরূপ। যেমন নফল নামাজসমূহ।উপরােক্ত ইবাদতের শ্রেণীগুলােকে আবার মােটামুটি দুইভাগে ভাগ করা যায়।

প্রথম তিনটিকে বাধ্যতামূলক ইবাদত ও শেষােক্ত দুটিকে অবাধ্যতামূলক। ৪বাদত হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। প্রথম শ্রেণীতে ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতে
ক্কাদাহ সীমাবদ্ধ আর দ্বিতীয় শ্রেণীতে সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ, নফল বা মস্তাহাব রয়েছে।

প্রথম শ্রেণীর ইবাদতগুলাে দ্বারা আল্লাহ পাক ও তাঁর প্রিয়। হাবীব (সাঃ)-এর নির্দেশ প্রতিপালিত হয়। গুনাহ হতে পরিত্রাণ পাওয়া যায় ও পারলৌকিক মুক্তির পথ সুগম হয়।

দ্বিতীয় শ্রেণীর ইবাদতগুলাে দ্বারা অশেষ পুণ্য অর্জিত হয় ও পারলৌকিক মুক্তি ও সফলতার ক্ষেত্রে বিশেষ মর্যাদা পাওয়া যায়, আর আল্লাহর নৈকট্য লাভের সহায়তা হয়।।
কাজের প্রকারভেদ এই পৃথিবীতে মানুষ যে সকল কাজ করে থাকে সেগুলােকে দুইভাগে ভাগ |

করা যায়। প্রথমতঃ করণীয় কাজ, দ্বিতীয়তঃ বর্জনীয় কাজ। এই উভয়বিধ কাজের মধ্যে কোন প্রকার কাজ মানুষের জন্য করা উচিত এবং কোন প্রকার কাজে মানুষের পারলৌকিক মুক্তি ও সফলতা দেখা দেবে, তা অনুধাবন করা প্রতিটি বিবেকবান লােকেরই দরকার।

১। করণীয় কাজ ও করণীয় কাজ বলতে নেককাজ বা সৎকাজ বুঝায়, যা পবিত্র কুরআন ও হাদীস কর্তৃক অনুমােদিত এবং জ্ঞানমনীষা ও বিবেক সম্মত। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ঘােষণা করেছেন ?

উচ্চারণ ঃ ইন্নাল্লাজীনা আমানু ওয়া ‘আমিলুচ্ছালিহাতি লাহুম জ্বান্নাতুন। তাজ্বরী মিন তাহতিহাল আনহার। ।
অর্থ ? অবশ্যই যারা ঈমান এনেছে ও নেক আমল করেছে তাদের জন্য । এমন সব বেহেশত রয়েছে যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত।
 

এই আয়াতে করুণাময় আল্লাহ নেক আমলকারীদের জন্য পরম সুখময় । বেহেশতের খােশ-খবরী প্রদান করেছেন। তবে এই নেক আমলের জন্য ঈমান। থাকা শর্ত। ঈমান না থাকলে কোন নেক আমলই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় ।

এই জন্যই দয়াময় আল্লাহ্ পাক ঈমানের কথা সর্বপ্রথম উল্লেখ করেছেন এবং তার পরে নেক আমল ও ইহার শুভ ফলের কথা তুলে ধরেছেন। | ঈমানের পাঁচটি স্তর বা ঘাঁটি রয়েছে। প্রথমতঃ একীন বা সুদৃঢ় আস্থা । প্রতিটি নেক আমল পূর্ণ আন্তরিকতা ও ইখলাসের সঙ্গে সমাধা করতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ, ইখলাসের সাথে আমল শেষ করা এবং সততা অবলম্বন করা। তৃতীয়তঃ, ফরজ অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশাবলি যা একান্ত অপরিহার্য তা পালন। করা। চতুর্থতঃ, যাবতীয় সুন্নাত পালন করা।চাই সুন্নাতে মুয়াক্কাদাই হােক বা সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাই হােক। সকল প্রকার সুন্নাতের প্রতি নিষ্ঠার সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে। এই সকল সুন্নাতের প্রতি কোন প্রকার অবহেলা প্রদর্শন করা চলবে।

কেননা, একটা সুন্নাত কোটি কোটি নফল ও মুস্তাহাব হতে উত্তম। পঞ্চমতঃ, মুস্তাহাব বা নফল কাজগুলাের প্রতি আদব সহকারে সতর্ক খেয়াল রাখা। সীমিত জীবনে সামান্য একটা নফল আমল করাও অসীম মূল্যবান। আর এই আমলের। দ্বারাই পরকালে পদমর্যাদার বৃদ্ধি ঘটে।

আলােচিত বিষয়াবলির মধ্যে প্রাথমিক লক্ষ্যণীয় বিষয় আদব রক্ষা করা। মানুষ যতদিন পর্যন্ত আদব সহকারে নিষ্ঠার সাথে নেক আমল করতে থাকে ততদিন পর্যন্ত বিতাড়িত শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিতে পারে না এবং তার দিকে অগ্রসর হতেই ভয় পায়। কিন্তু যদি আদব রক্ষা করা না হয়, তাহলে শয়তান তার ফরজ কাজগুলােতেই নানা রকম বিভ্রান্তি ও গােলমালের সৃষ্টি করে দেয়।

তারপর শয়তান আরাে অগ্রসর হয়ে তার ইখলাস ও একীনের দরজায় উপনীত
হয় এবং এগুলােতে গােলযােগ সৃষ্টি করে তাকে হয়রান-পেরেশান করতে থাকে।

এমতাবস্থায় বান্দাহ আমলের ক্ষেত্রে নানা রকম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। ইবাদতে একাগ্রতা ও স্বাদ লাভ করতে পারে না। ফলে হয় সে প্রকৃত পথ হতে বিভ্রান্ত।
তবে এই প্রসঙ্গে নেক আমলগুলাের শ্রেণীভেদ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করাও দরকার ! কেননা, নেক আমলসমূহ সাধারণতঃ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে থাকে। প্রথমতঃ প্রকাশ্য নেক আমলসমূহ এবং 

দ্বিতীয়তঃ, গােপন আমলসমূহ। প্রকাশ্য।

নেক আমলসমূহ ও কার্যাবলি সম্পর্কে সাধারণ লােক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ দলমত। নির্বিশেষে সকলেই অবগত হতে পারে। প্রকাশ্য নেক আমলগুলাের মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা, রমজান মাসের রােজা রাখা, মালদারের জন্য যাকাত আদায় করা, পবিত্র হজ্জ আদায় করা ইত্যাদি।

নেক আমলগুলাের মধ্যে অনেকগুলাে কাজ বা অনুষ্ঠান গােপনে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কর্তা ছাড়া এ সকল বিষয়াবলি সম্পর্কে বাইরের কেউ জানতে বা বুঝতে পারে না। যেমন আল্লাহ্ পাকের কুদরতী বিষয়গুলাের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখা। এবং যে সকল কাজে আল্লাহর মহত্ত্বের বিপরীত বিষয়াবলি সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা। এই শ্রেণীর নেক আমলগুলাের মধ্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আল্লাহর জিকির করাও শামিল রয়েছে।

২। বর্জনীয় কাজ ও বর্জনীয় কাজ বলতে মন্দ কাজ ও কুরআন এবং হাদীসের বিপরীত কার্যাবলিকে বুঝায়। বস্তুতঃ যে কাজের প্রতি কুরআন ও হাদীসের কোন রকম অনুমােদন নেই, সেই কাজ করা বর্জনীয় কাজের অন্তর্ভুক্ত।

যেমন হারাম কাজ, চুরি করা, অন্যায়ভাবে অন্যের মাল-দৌলত আত্মসাৎ করা। ইত্যাদি। এই সকল কাজের দ্বারা নেমে আসে দুর্যোগের ঘনঘটা। জান মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। ফলে গােটা জাতির চরিত্রই কলুষিত হয়ে পড়ে। ব্যক্তি চরিত্রের দ্বারাই জাতীয় চরিত্র গঠিত হয়।

যখন ব্যক্তি চরিত্র কলুষিত হয়ে পড়ে, তখন জাতীয় চরিত্র ক্লেদপূর্ণ হয়ে যায়। সুতরাং প্রত্যেক সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ, বিশেষ করে আলেম সম্প্রদায়ের উচিত, এই সমস্ত মন্দ কাজ হতে জনগণকে দূরে থাকার নির্দেশ প্রদান করা এবং জাতীয় চরিত্র পবিত্র রাখার জন্য চেষ্টা করা। হাদীস শরীফে আছে, হুজুর (সাঃ) বলেন ঃ 

তােমাদের মধ্যে যদি কেউ কোথাও মন্দ কাজ সংঘটিত হতে দেখে তাহলে তার উচিত স্বীয় হস্ত দ্বারা তা প্রতিহত করা, তবে যদি বাহুবলে প্রতিহত করার শক্তি না থাকে, মুখে তা নিষেধ করা আর যদি মুখে বলারও সামর্থ্য না থাকে, তাহলে অন্তরে ইহাকে ঘৃণা করা।'

বস্তুতঃ শরীয়ত বিরােধী কার্যাবলি ও মানবতা গর্হিত অনুষ্ঠানসমূহকে বাধা দেয়া হতে কোন মতেই বিরত থাকা চলবে না; বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে । পড়তে হবে। যারা এ সকল ব্যাপারে নীরবতার আশ্রয় গ্রহণ করে বা অলস হয়ে । বসে থাকে, করুণাময় আল্লাহ পাকের দরবারে তারা নিন্দনীয় ও অভিশপ্ত।। কেননা, যারা খারাপ কাজ করছে বা খারাপ কাজ সংঘটিত হতে দেখছে, কিন্তু ।

কখনাে একে অপরকে নিষেধ করছে না, বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে না তারা। খারাপ এবং মন্দ লােকের মধ্যে শামিল। স্বয়ং অন্যায়ের প্রতি সমর্থন ও অন্যায়ের।

প্রতি সহানুভূতি দেখানাে একই কথা। এমতাবস্থায় নীরব দর্শক হওয়া একান্তই গর্হিত ও অন্যায়।
প্রথমে বিরাজমান শাসন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অন্যায়কে প্রতিহত করার চেষ্টা। করতে হবে। যদি সরকারি সাহায্য লাভে বিলম্ব ঘটে বা সময়মত না পাওয়া যায়, তবে সৎ উপদেশের মাধ্যমে মন্দের বিরুদ্ধে অগ্রসর হতে হবে।

যদি প্রকাশ্য উপদেশের দ্বারাও সুফল পাওয়া না যায়

তাহলে মনে মনে সে কাজ বা অনুষ্ঠানের প্রতি ঘৃণা পােষণ করবে এবং ইহার সংস্পর্শ হতে নিজেকে এবং পরিবার-পরিজনকে দূরে রাখবে।অনুরূপভাবে যে সকল কাজ বা অনুষ্ঠান উম্মতে মােহাম্মদী এজমার বিপরীত অর্থাৎ কর্মের বিধান সম্পর্কে সুবিজ্ঞ আলেম সমাজের সর্ববাদী সম্মত সুষ্ঠু সিদ্ধান্তের বিপরীত, এটা হতেও মানুষকে নিষেধ করতে হবে। 

মনে রাখবে, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করার দায়িত্ব শুধু কেবল মহৎ ও নেক লােকদের উপরই ন্যস্ত নয়, সমাজের সর্বস্তরের। লােকের উপরই এই পবিত্র দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে।

এই ক্ষেত্রে বান্দাদের কাজ বা নেক আমল সাপ্তাহিক দিনগুলাের বরকতময়। শ্রেষ্ঠ দিন হতেই শুরু করা দরকার। কেননা যে কাজের শুরু হয়েছে বরকতপূর্ণ পরিবেশে, উহার শেষ ফলও পাওয়া যায় অশেষ রহমত ও করুণার দ্বারা পরিপুত হয়ে।

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব অবস্থায় ইহা ভালাের ভিতর দিয়ে অতিবাহিত। হয়। যা ভালাে এবং মঙ্গলকর তা ব্যক্তি জীবনে যেমন সুফল বয়ে আনে, তেমনি সমাজ বা জাতীয় জীবনেও কল্যাণকর ভূমিকা পালন করে থাকে।

বিভিন্ন হাদীস। গ্রন্থ পাঠে জানা যায় যে, পরম করুণানিধান ও কৌশলী আল্লাহ পাকের সৃষ্ট। দিনগুলাের মধ্যে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, আরাফা এবং আশুরার দিন শ্রেষ্ঠ ও। ফযিলতের অধিকারী। এগুলাের মধ্যে আরাফার দিনকে অধিক শ্রেষ্ঠত্ব দান করা।

হয়েছে। কারণ এই দিন উপস্থিত বান্দাদের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। তাছাড়া রাতগুলাের মধ্যে শবে বরাত, শবে কদর, শবে জুমা এবং ঈদের রাত শ্রেষ্ঠ ও মর্তবাওয়ালা। তন্মধ্যে কদরের রাতকে আল্লাহ পাক অধিক মর্যাদার। অধিকারী করেছেন। নিম্নে পর্যায়ক্রমে এগুলাের বিশদ বিবরণ পেশ করা হল।


আমাদের কিছু কথা

বাংলায় লিখতে গিয়ে যদি কোনো ধরনের ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

এবং যদি আপনাদের কোন ধরনের সাজেশন থাকে তাহলে অবশ্য আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন

আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ

আমাদের এই পোস্টে ভিজিট করার জন্য

এবং যদি ভালো লাগে এই পোস্টটি তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

Post a Comment

0 Comments