নাফসের উপর যুলুম - হযরত আয়েশা রাঃ এর জীবনী বই part4

 হযরত আয়েশা রাঃ এর জীবনী বই

হযরত আয়েশা রাঃ এর জীবনী

নাফসের উপর যুলুম

পবিত্র কুরআনে নফস' শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যথাজীবনীশক্তি, শক্তি, সম্প্রদায়, জীবন, প্রাণ ইত্যাদি। তবে নফস’ বলতে সামগ্রিকভাবে প্রাণকেই বুঝানাে হয়ে থাকে। আর প্রাণই হচ্ছে দেহ কাঠামাের মূল যন্ত্র। প্রাণ আছে বলেই দেহ কাঠামাে সচল থাকে। পক্ষান্তরে প্রাণ না থাকলে
দেহ কাঠামাের কোন মূল্যই থাকে না। এই প্রাণ-সত্তাকে আল্লাহর মনােনীত ও  

পছন্দনীয় পন্থায় পরিচালিত করাই হলাে প্রকৃত ইবাদত এবং বন্দেগী। কিন্তু
প্রাণ-সত্তাকে আল্লাহর নাফরমানী ও নিষেধের পথে পরিচালিত করাকে জুলুম’ বলা হয়। সুতরাং নফসের উপর জুলুম করার অর্থ হলাে, আল্লাহর নাফরমানীর।

পথে গা ভাসিয়ে দেয়া এবং আল্লাহর আজাব ও গজবের দিকে অগ্রসর হওয়া। ইহা মানুষের ইচ্ছাশক্তি ও ক্রিয়া-কর্মের দ্বারাই পরিসাধিত হয়। 

    Read More:  ➣   হযরত আয়েশা রাঃ এর জীবনী

মানুষ যদি স্বীয় প্রাণ-সত্তাকে আল্লাহর আদেশ প্রতিপালন ও নিষেধ বর্জনের মাধ্যমে পরিচালিত। করে; তাহলে সে আল্লাহর রেজামন্দি ও সন্তুষ্টি হাসিল করতে সক্ষম হয় এবং নফসের হক আদায়ের পথ উন্মুক্ত করে থাকে। তা না হলেই নফসের উপর জুলুম করা হয়। পরম করুণাময় আল্লাহ পাক হযরত আদম (আঃ) এর জবান থেকে। তাই উচ্চারিত করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে ?
উচ্চারণ ঃ রাব্বানা জালামনা আনফুছানা।

অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমরা নিজেদের নফসের উপর জুলুম করেছি। ফলকথা, নফসকে যেভাবে চালনা করার কথা ছিল, সেভাবে পরিচালনা না করে ভুল পথে পরিচালনা করেছি। এই ক্ষেত্রে জুলুমের মূল তাৎপর্য অনুধাবন করাও। দরকার।

অন্যথায় ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হওয়া বিচিত্র নয়। ইসলামের পরিভাষায় জুলুম অর্থ হচ্ছে- কোনও জিনিসকে ইহার যথার্থ স্থানে না রেখে অন্য কোথাও সংস্থাপন করা। 

আল্লাহর দেয়া প্রাণ-শক্তিকে আল্লাহর কাজে ব্যয় করাই হচ্ছে নফসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। যে প্রাণ-শক্তি দ্বারা তা পরিসাধিত হয় না বা আল্লাহর নির্দেশ পালনের অনুপ্রেরণা না জাগে, সে নফস জুলুমের শিকার হয়েছে। বলে ধরে নিতে হবে।
চতুর্থত ও বর্ণিত মাস চতুষ্টয়ে আল্লাহর বিশ্বাসী বান্দাগণ স্বতঃপ্রণােদিত হয়ে জুলুম, অত্যাচার, যুদ্ধ-বিগ্রহ, মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি ইত্যাদি থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখবে।

 কিন্তু মােশরেক ও বিধর্মীরা যদি ইহাকে মুমিনদের দুর্বলতা মনে করে তাদের প্রতি আক্রমণ পরিচালনা করে তাহলে মুমিনগণকে নিজেদের জান, মাল, ইজ্জত রক্ষার্থে শত্রুকে প্রতিহত করার জন্য অস্ত্র হাতে। রুখে দাঁড়াতে হবে। শত্রুর বিষদাঁত ভেঙ্গে দেয়ার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। করতে হবে। আক্রান্ত অবস্থায় নিষ্ক্রিয়তা মােটেই চলবে না।
 
ইসলাম শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের নীতির ধারক ও বাহক। পরস্পর সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং কলুষমুক্ত মন ও মানসিকতা নিয়ে জীবনকাল অতিবাহিত করা প্রকৃত মুসলিমের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। নির্দিষ্ট চার মাসে ইহার জন্য অনুশীলন করা এবং বাকি মাসগুলােতে তদনুযায়ী আমল করা প্রতিটি। বিশ্বাসী বান্দার উচিত।

অন্যথায় আল্লাহর নির্দেশের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হবে। এবং পরিণামে কঠিন আজাবের ভাগী হতে হবে। এর প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করে। পরম করুণাময় আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন ।

উচ্চারণ ঃ কাদ আফলাহা মান যাক্কাহা অকৃাদ খাবা মান দাড্ডাহা।।
অর্থাৎ- যে স্বীয় নফসকে কলুষমুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছে, সে সফলকাম। হয়েছে এবং যে স্বীয় নফসকে কলুষিত করেছে, সে বিফল মনােরথ হয়েছে। দুনিয়ার জিন্দেগীতে সে যেমন অকৃতকার্য বলে বিবেচিত হয়েছে, তেমনি হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ)-৩।

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) আখেরাতের অনন্ত জীবনের বেলায়ও সে মুক্তির আস্বাদ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে না।
এক্ষেত্রে আরাে স্মরণ রাখতে হবে যে, আল্লাহ পাকের সুনিয়ন্ত্রিত বারােটি। মাস কী কী? এই মাসগুলাে হচ্ছে - (১) মহররম, (২) ছফর, (৩) রবিউল আউয়্যাল, (৪) রবিউচ্ছানী, (৫) জমাদিউল উলা, (৬) জমাদিউচ্ছানী, (৭)। রজব, (৮) শাবান, (৯) রমজান, (১০) শাওয়্যাল, (১১) যিলকদ এবং (১২) যিলহাজ্জ্ব।

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ও বিভিন্ন ভাষাভাষী লােকেরা এই বারােটি মাসকে , নিজেদের সুবিধামত সময়ের কিছুটা হেরফের করে বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করেছে। যেমন বাংলা ভাষায় বারাে মাসের নাম; বৈশাখ, জৈষ্ঠ, আষাঢ় ইত্যাদিরূপে পরিচিত্রিত করা হয়েছে এবং ইংরেজি ভাষায় জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়েছে। মাস গণনার ক্ষেত্রে মানুষের বানানাে।

ব্যবস্থায় যথেষ্ট অসুবিধা পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু আল্লাহর দেয়া মাসপঞ্জীতে কোন রকম অসুবিধা পরিদৃষ্ট হয় না। অনেক ক্ষেত্রে মানুষের বানানাে ব্যবস্থা আল্লাহ প্রদত্ত ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে সম্যক জ্ঞান লাভ করার জন্য নিচের উদাহরণটির প্রতি লক্ষ্য করা প্রতিটি পাঠক ও পাঠিকার একান্ত কর্তব্য।

আল্লাহ প্রদত্ত ব্যবস্থায় দিন বলতে সূর্য উদয় হতে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সময়কে বুঝানাে হয়ে থাকে এবং রাত্র বলতে সূর্য অস্ত হতে শুরু করে উদয় পর্যন্ত। সময়কে নির্দেশ করা হয়। যদি কোন লােক সূর্য উদয় ও অস্তের মাঝে জন্মগ্রহণ।

করে, তাহলে সে দিবসে জন্মগ্রহণ করেছে বলে ধরা হবে। আবার সূর্য অস্ত হতে উদয় পর্যন্ত সময়ে জন্মগ্রহণকারী লােককে রাতে জন্মগ্রহণকারী বলে আখ্যায়িত। ইহা সঠিক পন্থা। করা হবে। কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ প্রদত্ত এই ব্যবস্থার কোন ব্যতিক্রম হবে না।
অপরদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইংরেজদের প্রবর্তিত দিন ও মাসের ।

সময়পঞ্জী অনুসরণ করা হয়। ইংরেজী ক্যালেণ্ডার অনুসারে দিনের ১২টার পর। হতে রাতের ১২টা পর্যন্ত সময়কে দিন বলা হয় এবং রাতের ১২টার পর হতে দিনের ১২টা পর্যন্ত সময়কে রাত বলা হয়, অর্থাৎ দিনের ৬ ঘণ্টা ও রাতের ৬ ঘণ্টা মিলে ‘একদিন’ এবং রাতের ৬ ঘণ্টা ও দিনের ৬ ঘণ্টা মিলে ‘একরাত’ ধরা । হয়। সুসভ্য জগতের এই গােজামিল যে কতখানি হাস্যস্পদ তা বলাই বাহুল্য।

সদ সর্য উদয়ের পর ঠিক দুপুরের পরে কোন শিশু জন্মগ্রহণ করে, তবে সজি ক্যালেণ্ডার অনুসারে বলা হবে যে, সে রাতে জন্মগ্রহণ করেছে। আবার শিশু যদি রাত ১২টার পর জন্মগ্রহণ করে, তাহলে বলা হবে যে, সে দিনে তণ করেছে। দিনকে রাত বলা এবং রাতকে দিন বলা শুধু কেবল সভ্যতার।

ধ্বজাধারী মানুষের বানানাে ব্যবস্থাতেই সম্ভব। আল্লাহর দেয়া সঠিক ও সর্বাঙ্গ সন্দর বিধি ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে মানুষ যতই নিজেদেরকে সুসভ্য ও উন্নত বিবেচনা করুক না কেন, ইহা যে নিতান্তই ভুল এবং ভিত্তিহীন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবু আজ আমরা এই ভুলকেই মূল বিবেচনা করে আঁকড়ে ধরে আছি।। ধিক আমাদের বিবেচনাকে।

যাত্রা হল শুরু দিন, মাস এবং বছর নিয়েই চলমান বিশ্বের যাত্রা শুরু হয়েছে, তেমনি এর যাত্রা বিরতিও ঘটবে দিন, মাস কিংবা বছরের যে কোন প্রান্তে। এ চলার প্রথম। পদক্ষেপ দিন, দ্বিতীয় পদক্ষেপ মাস এবং তৃতীয় পদক্ষেপ বছর। জাগতিক নিয়ম ও শৃংখলা বজায় রাখার জন্য দিন ও রাতের সময়কে ঘণ্টা, দণ্ড, পল ইত্যাদিতে বিভক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া দিনের সঙ্গে ওৎপ্রােতভাবে জড়িত রয়েছে রাত। দিনের আবর্তনের সাথে সাথেই রাতও আবর্তিত হচ্ছে।

এ আবর্তন রােজ কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। দিনের পর রাত ও রাতের পর দিন আগমন ও নির্গমনের এ খেলা কবে থেকে শুরু হয়েছে এবং কবে ইহার শেষ সময় দেখা দেবে, তা মানুষের অজানা। মানুষ সীমিত সময়ের জন্য পৃথিবীতে আগমন করে এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এই পৃথিবী মানুষের জন্য আসা-যাওয়ার এক বিরাট পান্থশালা স্বরূপ।

এখানে চিরস্থায়ীভাবে পূর্বেও কেউ থাকেনি, এখনাে থাকছে না এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না।।
কিন্তু এই পান্থশালায় মানুষ যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন তাকে কাজ করতে হবে। কাজের মাধ্যমেই তার প্রকৃত মর্যাদা প্রতিফলিত হবে। এ প্রসঙ্গে দিন ও রাতের মৌলিক উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আল্লাহ বলেন :

উচ্চারণ ঃ ওয়া জ্বাআলনাল্লাইলা লিবাছাউ ওয়া জ্বাআলনান্নাহারা মাআশা।।

অর্থাৎ রাত্রকে আমরা শান্তি গ্রহণের আবরণস্বরূপ এবং দিনকে। রুজী-রােজগারের উপায়রূপে সৃষ্টি করেছি। দিনের বেলা মানুষ কাজ-কর্ম । সংসার ধর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি কাজে নিয়ােজিত থাকে, যাতে করে । পরিবার-পরিজনের প্রয়ােজনীয় দ্রব্য-সামগ্রী লাভ করতে সক্ষম হয়। আর দিনের।

অক্লান্ত পরিশ্রম থেকে মুক্ত হয়ে শান্তি লাভ করা মানুষের জন্য নিতান্ত দরকার। আর এ শান্তি লাভের জন্য করুণাময় আল্লাহ পাক রাতের ব্যবস্থা করেছেন এবং । রাতকে শান্তি লাভের উপকরণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

শুধু কেবল দিনে কাজ এবং রাতের শান্তি লাভের নিমিত্ত অলসভাবে পড়ে। থাকলেই চলবে না; বরং তার সাথে আল্লাহ পাকের আদেশ-নিষেধও পালন করে। চলতে হবে। তা না হলে আল্লাহর নাফরমান বান্দা হিসেবে পরিগণিত হবে।। বস্তুতঃ সকল কাজ এবং সকল অবস্থায় আল্লাহর রেজামন্দি লাভের জন্য সর্বাত্মক । প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কেননা, দুনিয়ার কাজ-কর্ম, ধন-সম্পদ পৃথিবীতে প্রাচুর্য। লাভের আশায় না হয়ে আল্লাহ পাকের খােশনুদী হাসিলের জন্য হলেই পরিণামে ।

মানুষ সফলকাম হতে পারে। অন্যথায়, তার দুনিয়ার জীবন যেমন বরবাদ হয়ে। যায়, তেমনি আখেরাতের জীবনেও সে আজাবের ভাগী হয়।
এ পর্যায়ে দিনের পরিচয়, ফযিলত এবং ইবাদত সম্বন্ধে ওয়াকেফহাল হওয়া । সকলেরই দরকার। আসুন, তা অনুধাবনে সচেষ্ট হই।

আরবিতে ৭ বারের নাম। ১। ইয়াউমুল জুমুআ।। ২। ইয়াউমুচ্ছাবত। ৩। ইয়াউমুল আহাদ। ৪। ইয়াউমুল এছনান। ৫। ইয়াউমুচ্ছালাছ। ৬। ইয়াউমুল আরবাআ। ৭। ইয়ামুল খামছ।

সাত দিনে এক সপ্তাহ এবং ঊনত্রিশ বা ত্রিশ দিনে এক মাস এবং বারাে। মাসে এক বছর হয়। যেহেতু সমষ্টিগতভাবে দিনের সমন্বয়েই মাস গঠিত হয়, সেহেতু দিন এবং মাসের ফযিলত ও বরকত সম্বন্ধে অবগত হলেই আমলের জন্য

যথেষঠ। প্রয়ােজনীয় বিষয়াবলির প্রতি লক্ষ্য রেখে আমল করাই হচ্ছে প্রতিটি
মানুষের অপরিহার্য কর্তব্য।

    Read More:  ➣   মহিলা ও পর্দা - মহিলাদের পর্দা

 


আমাদের কিছু কথা

বাংলায় লিখতে গিয়ে যদি কোনো ধরনের ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

এবং যদি আপনাদের কোন ধরনের সাজেশন থাকে তাহলে অবশ্য আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন

আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ

আমাদের এই পোস্টে ভিজিট করার জন্য

এবং যদি ভালো লাগে এই পোস্টটি তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

Post a Comment

4 Comments

Please Don't Send Any Spam Link