শবে কদরের নামাজের নিয়ত-নিয়ম এবং আমাদের করণীয় - Islamic History Bangla

Islamic History Bangla site - islamic life

 শবে কদরের নামাজের নিয়ত-নিয়ম এবং আমাদের করণীয়

রমজান মাসের শেষ দশ দিনের যেকোন বেজোড় রাত শবে-কদর। তবে সাধারণভাবে ২৭ রমজানের রাতকেই শবে-কদর ধরা হয়। এই রাতের কোন এক সময় পৃথিবীর সকল অচেতন পদার্থ, বৃক্ষ-লতা ইত্যাদি আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে সিজদাহ্‌ করে থাকে। 

More Info: হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী

এই রাতে ফেরেশতাগণ পৃথিবীতে এসে মানুষের ইবাদত পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাদের শান্তি কামনা করেন। তাই এই রাতে জেগে থেকে কুরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ, দোয়া-দুরূদ, জিকির ইত্যাদি ইবাদত বেশি করে করা প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। 

More Info: বদর হতে ওহোদ

শবে-কদরের নামাজের নিয়ত

নাওয়াইতু আন্‌ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকআতাই সালাতিল লাইলাতিল কাদ্‌রি নফ্‌লে মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি- আল্লাহু আকবর।

অর্থ: আমি কাবামুখী হয়ে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য শবে কদরের দুই রাকআত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবর। 

More Info: মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)

শবে-কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম

শবে-কদরের নামাজ দুই রাকআত করে চার রাকআত পড়তে হয়। এরপর যত ইচ্ছা নফল নামাজ পড়া যায়। এই নামাজের প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহার পর একবার সূরা কদর ও তিনবার সূরা ইখ্‌লাস পড়তে হয়।

নামাজ শেষে নিচের দোয়াটি কমপক্ষে একশত বার পড়া উত্তম:

“সুব্‌হানাল্লাহি ওয়াল হাম্‌দু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, লা হা’ওলা কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহিল্‌ আলীয়্যিল আযীম”।

‘লাইলতুল কদর’ আরবি শব্দ। শবে-কদর হলো ‘লাইলাতুল কদর’ -এর ফারসি পরিভাষা। কয়েক শতাব্দী মুঘল শাসন এবং উপমহাদেশে ফারসি রাজকীয় ভাষা থাকার কারণে ধর্ম, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বিচার-আচারের বহু ফারসি শব্দ আমাদের সংস্কৃতির সাথে একাকার হয়ে গেছে।

‘সালাতের’ পরিবর্তে নামাজ, ‘সাওমের’ পরিবর্তে রোজার মতো লাইলাতুল কদর এর ফারসি পরিভাষা শবে কদর সাধারণ মানুষের কাছে তাই বেশি পরিচিত।

‘শব’ অর্থ রাত, আর আরবি ‘লাইলাতুন’ শব্দের অর্থও রাত বা রজনী। কদর অর্থ সম্মানিত, মহিমান্বিত। সুতরাং লাইলাতুল কদরের অর্থ সম্মানিত রজনী বা মহিমান্বিত রজনী।

লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত : পবিত্র কুরআন ও সহীহ-হাদীস দ্বারা লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ‘শব-ই-বরাত’ নিয়ে এবং শব-ই-বরাতের হাদিসগুলোর বর্ণনা নিয়ে হাদিস বিশেষজ্ঞ ও ফকিহ্দের মধ্যে যে সংশয় রয়েছে- লাইলাতুল কদরের ব্যাপারে তার কোনো অবকাশ নেই।

পবিত্র কুরআন, নির্ভরযোগ্য হাদিস এবং রাসূলুল্লাহ সা:-এর লাইলাতুল কদরের জন্য গৃহীত কর্মতৎপরতা লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

এ সম্মানিত রজনীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি এ (কুরআনকে) কদরের রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জান, কদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাস হতেও উত্তম-কল্যাণময়’ (সূরা আল কদর : ১-৩)। এ রাতটি কোন মাসে?

এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘রমজান এমন মাস যাতে কুরআন নাযিল হয়েছে-’ (বাকারা : ১৮৫)। এ রাতটি রমজানের কোন তারিখে? রাসূলুল্লাহ সা: একটি রহস্যময় কারণে তারিখটি সুনির্দিষ্ট করেননি।

ইমাম বুখারি, ইমাম মুসলিম, ইমাম আহমদ ও ইমাম তিরমিযী কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে হজরত আয়েশা রা: বর্ণনা করেছেন, নবী করীম সা: বলেছেন, ‘কদরের রাতকে রমজানের শেষ দশ রাতের কোনো বেজোড় রাতে খোঁজ কর’।

হজরত আবু বকর রা: ও হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত হাদিস থেকেও এ একই ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। অবশ্য কোনো কোনো ইসলামি মনীষী নিজস্ব ইজতিহাদ, গবেষণা, গাণিতিক বিশ্লেষণ ইত্যাদির মাধ্যমে রমজানের ২৭ তারিখের রাতে (অর্থাৎ ২৬ রোজার দিবাগত রাতে) শব-ই-কদর হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা জোর দিয়ে বলেছেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সা: এটাকে সুনির্দিষ্ট করেননি বরং কষ্ট করে খুঁজে নিতে বলেছেন।

এ রাতের আর একটি গুরুত্ব হল এ পবিত্র রাতেই কুরআন নাযিল হয়েছে। আর এ কুরআনের সাথেই মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে। এ জন্য কদরের আর একটি অর্থ হল- ভাগ্য। তাহলে লাইলাতুল কদরের অর্থ হয় ভাগ্য রজনি।

যে মানুষ, যে সমাজ, যে জাতি, কুরআনকে বাস্তব জীবন বিধান হিসাবে গ্রহণ করবে তারা পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে সম্মানীত হবে। এ রাতে নাযিলকৃত কুরআনকে যারা অবহেলা করবে তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।

এ রাতেই মানব কল্যাণে আল্লাহ মানুষের জন্য চূড়ান্তু সিদ্ধান্ত ফেরেস্তাদের জানান। আল্লাহ বলেন- “এ রাতে প্রত্যেকটি ব্যাপারে অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত ও সুদৃঢ় ফায়সালা জারি করা হয়।” (সূরা দুখান : ৪)

মহান আল্লাহ আরো বলেন- ‘ফেরেশতারা ও রূহ (জিব্রাইল আ:) এ রাতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হয়, সে রাত পুরাপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার-ফজর উদয় হওয়া পর্যন্তু।’ (সূরা আল-কদর : ৪-৫)

লাইলাতুল কদরের ফজিলত গুলো সংক্ষেপে নিম্নরূপ -

এ রাতটি হাজার মাস হতে উত্তম- কল্যাণময় (কুরআন)

এ রাতেই পবিত্র কুরআন নাযিল করা হয়েছে । (কুরআন)

এ রাতে ফেরেস্তা নাযিল হয় এবং আবেদ বান্দাহদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন ।

ফজর পর্যন্ত এ রাতে পুরাপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার (কুরআন)

এ রাতে প্রত্যেকটি ব্যাপারে অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত ও সুদৃঢ় ফায়সালা জারি করা হয় । (কুরআন)

এ রাতে ইবাদতে মশগুল বান্দাদের জন্য অবতরণকৃত ফেরেশতারা দু’আ করেন । (হাদিস)

গুনাহ মাফ : ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান সহকারে ও আল্লাহর নিকট হতে বড় শুভফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, তার পিছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ (বুখারি-মুসলিম)

এ রাতে কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক ছাড়া আর কেউ বঞ্চিত হয় না। (ইবনে মাজাহ-মিশকাত)

কিয়ামূল লাইল

‘কিয়ামুল লাইল’ অর্থ হল রাত্রী জাগরণ। মহান আল্লাহর জন্য আরামের ঘুম স্বেচ্ছায় হারাম করে রাত জেগে ইবাদত করা আল্লাহর প্রিয় বান্দাহদের একটি গুন। মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাহদের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে ‘তারা রাত্রী যাপন করে রবের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে থেকে।’(সূরা ফুরকান : ৬৪)

মুসনাদে আহমেদ গ্রন্থে হজরত ওবায়দা ইবনে সামেত বর্ণিত হাদিসে উদ্বৃত হয়েছে- ‘নবী করীম সা: বলেছেন- কদরের রাত রমজান মাসের শেষ দশ রাতে রয়েছে। যে ব্যক্তি উহার শুভফল লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, আল্লাহ তার আগের পিছনের গুনাহ মাফ করে দিবেন।’

রাসূল সা: রমজানের শেষ দশদিন মসজিদে এ’তেকাফে থাকতেন এবং ইবাদতে গভীর মনোনিবেশ করতেন। কাজেই আমরা কোনো একটা বিশেষ রাতকে নির্দিষ্ট না করে হাদিস অনুযায়ী অন্তত রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য লাভের আশায় ইবাদতে মশগুল হই।

রাসূল সা: বলেন- ‘যে ব্যক্তি এ রাত থেকে বঞ্চিত হবে সে সমগ্র কল্যাণ ও বরকত হতে বঞ্চিত হবে। এর কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক আর কেউ বঞ্চিত হয় না।’ (মিশকাত)

এ রাতে আমাদের করণীয়-

কুরআন অধ্যয়ন : এ রাতে পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছে। মানব জাতির এ বিরাট নিয়ামতের কারণেই এ রাতের এত মর্যাদা ও ফজিলত। এ কুরআনকে ধারণ করেলেই মানুষ সম্মানীত হবে, দেশ ও জাতি মর্যাদাবান হবে; গোটা জাতির ভাগ্য বদলে যাবে। কাজেই এ রাতে অর্থ বুঝে কুরআন পড়তে হবে।

কুরআনের শিক্ষাকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠার শপথ গ্রহণ করতে হবে। বাছাইকৃত কিছু আয়াত এ রাতে মুখস্তও করা যেতে পারে। যাদের কুরআনের উপর প্রয়োজনীয় জ্ঞান রয়েছে তাঁরা এ রাতে একটি দারসও প্রস্তুত করতে পারেন।

পড়ার নিয়ম : ন্যুনতম ৮ রাকাত থেকে যত সম্ভব পড়া যেতে পারে। এজন্য সাধারণ সুন্নতের নিয়মে ‘দু’রাকাত নফল পড়ছি’ এ নিয়তে নামাজ শুরু করে শেষ করতে হবে। এ জন্য সূরা ফাতিহার সাথে আপনার জানা যেকোনো সূরা মিলালেই চলবে। বাজারে প্রচলিত কিছু বইতে ৩৩ বার সূরা আল্ কদর, ৩৩ বার ইখলাস ইত্যাদি উল্লেখ করে অহেতুক জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে ।

এছাড়া সালাতুল তাওবা, সালাতুল হাজত, সালাতুল তাসবিহ নামাজও আপনি পড়তে পারেন। এগুলোর নিয়ম আপনি মাসয়ালার বইগুলোতে পাবেন। রাতের শেষভাগে কমপক্ষে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ার চেষ্টা আমরা অবশ্যই করব। কারণ এ নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ নফল নামাজ। আর রাতের এ অংশে দোয়া কবুল হয়। নফল নামাজের সংখ্যার হিসাবের চেয়ে নামাজের গুণগত দিকটির দিকে আমাদের বেশি লক্ষ্য রাখতে হবে।

জিকির ও দোয়া : হাদিসে যে দোয়া ও জিকিরের অধিক ফজিলতের কথা বলা হয়েছে সেগুলো থেকে কয়েকটি নির্বাচিত করে অর্থ বুঝে বার বার পড়া যেতে পারে। ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) ও দরুদ আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়।

কমপক্ষে ১০০ বার ইস্তেগফার ও ১০০ বার দরুদ পড়া যেতে পারে। হযরত আয়েশা রা: বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা: কে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ- যদি কোনো প্রকারে আমি জানতে পারি রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে কি দোয়া করব ?

জবাবে নবী সা: বলেন, এ দোয়া পড়বে- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুব্বুন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।” অর্থাৎ ‘আয় আল্লাহ তুমি বড়ই মাফ করণেওয়ালা এবং বড়ই অনুগ্রহশীল। মাফ করে দেয়াই তুমি পছন্দ কর। অতএব তুমি আমাদেরা গুনাহগুলো ক্ষমা করে দাও।’

আত্মসমালোচনা : আত্মসমালোচনা অর্থ আত্মবিচার। অর্থাৎ আপনি নিজেই নিজের পর্যালোচনা করুন।। জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোতে আল্লাহর কতগুলো হুকুম অমান্য করেছেন, আল্লাহর ফরজ ও ওয়াজিবগুলো কতটা পালন করেছেন এবং তা কতটা নিষ্ঠার সাথে করেছেন।

ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় কি কি বড় গুনাহ আপনি করে ফেলেছেন, আল্লাহর গোলাম হিসাবে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় আপনি কতটুকু ভূমিকা রেখেছেন- এগুলো ভাবুন, যা কিছু ভালো করেছেন তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন, আর যা হয়নি তার জন্য আল্লাহর ভয় মনে পয়দা করুন, সত্যিকার তওবা করুন।

এ রাতে নিরবে নিভৃতে কিছুটা সময় এ আত্মসমালোচনা করুন, দেখবেন আপনি সঠিক পথ খুঁজে পাবেন। আত্মসমালোচনা আমাদের বিবেককে জাগিয়ে তুলবে। আত্মসমালোচনা আত্মশুদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। মহান আল্লাহ বলেন- ‘হে ঈমানদার লোকেরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামীকালের জন্য (পরকাল) সে কি প্রেরণ করেছে তা চিন্তা করা’(সূরা হাশর : ১৮)

মুনাজাত : মুনাজাতের মাধ্যমে বান্দার বন্দেগি ও আল্লাহর রবুবিয়াতের প্রকাশ ঘটে। বান্দাহ তার প্রভূর কাছে চায়। প্রভূ এতে ভীষণ খুশি হন। মহন আল্লাহ তার বান্দার প্রতি এতটাই অনুগ্রহশীল যে, তিনি তার কাছে না চাইলে অসস্তুষ্ট হন। ‘যে আল্লাহর নিকট কিছু চায় না আল্লাহ তার উপর রাগ করেন’- (তিরমিযি)।

‘দোয়া ইবাদতের মূল”- (আল হাদিস)।’ যার জন্য দোয়ার দরজা খোলা তার জন্য রহমতের দরজাই খোলা রয়েছে’- (তিরমিযি)। কাজেই আমরা কায়মনোবাক্যে আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করব, ক্ষমা চাইব, রহমত চাইব, জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাইব।

উপরোক্ত আমলের মাধ্যমে আমরা এ পবিত্র রাতগুলো কাটাতে পারি। লাইলাতুল কদর পাওয়ার তামান্না নিয়ে নিষ্ঠার সাথে অনুসন্ধান করলে আল্লাহ আমাদের বঞ্চিত করবেন না ইনশাআল্লাহ। অবশ্য নফল ইবাদত নিরবে নিভৃতে ঘরে আদায় করাই মাসনুন।

এতে আমাদের ইবাদত রিয়া (প্রদর্শন ইচ্ছা) দোষে দুষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। এ পবিত্র রাতে কিছু অনাকাঙ্খিত কাজ হতে দেখা যায়। এগুলো বন্ধ করার জন্য গঠনমূলক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর : হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ পবিত্র লাইলাতুল কদর আজ। লাইলাতুল কদর শবে কদর নামে অধিক পরিচিত। বস্তুত শবে কদর আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বান্দাদের জন্য এক মহান নিয়ামত। শবে কদর প্রাপ্তি মুমিন জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। এই রাতের রয়েছে অপরিসীম গুরুত্ব, অমূল্য মর্যাদা ও বহুবিধ বৈশিষ্ট্য।

মহান আল্লাহ তায়ালা মহিমান্বিত এই রজনীতেই পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করেন; হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন মুহাম্মদ (সা.) এর কাছে প্রথম পৌঁছান মুক্তির বাণী ‘ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক’।

এই রাতের মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে পবিত্র কোরআন শরিফের সূরা কদরে আল্লাহ পাক বলেন, ‘লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহ্র’। অর্থাৎ হাজার মাসের চেয়ে সর্বোত্তম এই রাত। এ রাতে শেষ আসমানে এসে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দাদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘তোমাদের মাঝে এমন কে আছো, যে আমার কাছে নাজাত চাও? কল্যাণ চাও? তোমাদের মধ্যে কে আছো, যে মুক্তি চাও ?

৬টি বিষয় সম্পর্কে জানুন, নিশ্চিতভাবে শবে কদর লাভ করুন

মিরাজ রহমান

শবে কদর কবে 

এ রাত চেনার কোনো আলামত আছে কি? লাইলাতুল কদরে আমাদের করণীয়, বর্জনীয় কী ?
মহিমান্বিত এ রজনীতে মাত্র ১ ঘন্টা আমল-ইবাদতে সময় ব্যয় করা মানে অন্য সময়ে ৮ বছর ৩৩ দিন বা ৭২ হাজার ৯৯৬ ঘন্টা লাগাতার আমল-ইবাদতে সময় ব্যয় করার সমান ।
এছাড়া এ প্রবন্ধে আরো থাকছে, বেজোড় রাতের পরিচয় ও নিশ্চিতভাবে লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির সহজ আমলের বর্ণনা ।

‘শব’ বা ‘লাইল’ অর্থ রাত। আর ‘কদর’ অর্থ মর্যাদা। শবে কদর বা লাইলাতুল কদর অর্থ ‘মর্যাদার রাত’। কোনো কোনো আরবি অভিধানের বর্ণনা মতে ‘কদর’ শব্দের অর্থ ‘ভাগ্য’ ধরে এ রাতকে ‘ভাগ্য নির্ধারণ রজনী’ও বলা হয়। লাইলাতুল কদরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো- এ রজনীতে ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।

পবিত্র কোরআনের সূরা কদরের ১ থেকে ৫ নং আয়াতে আল্লাহ মহান ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি পবিত্র কোরআনুল কারীমকে লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেছি। আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কি?
লাইলাতুল কদর হলো- হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত ।

এ রাতে ফেরেশতাগণ ও জিবরাঈল (আ.) তাদের প্রতিপালকের নির্দেশে প্রত্যেক বিষয় নিয়ে অবতীর্ণ হন। এটা এক শান্তিময় রজনী- যা ফজর উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’

পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহ তাআলা উম্মতে মোহাম্মাদীর জন্য ‘শবে কদর’ নামে এমন এক পুরস্কার দান করেছেন, যা অন্য কোনো নবীর কোনো উম্মতকে দান করা হয়নি।

লাইলাতুল কদর কবে

নির্দিষ্ট করে ‘লাইলাতুল কদর’ চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। কারণ এ রজনীকে নির্দিষ্টকরণমূলক কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। অনেকেই মনে করেন, ২৬ রমজান দিবাগত রাতটিই লাইলাতুল কদর। এমনটা ধারণা করা কোনোভাবেই সঠিক নয়। পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের যে কোনো একটি বেজোড় রাতই ‘শবে কদর’ হতে পারে।

বোখারী শরীফের ৭০৯ নং হাদীসে নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছে, অতঃপর আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতসমুহে তা খোঁজ করবে।’

মুসলিম শরীফের ১১৬৯ নং হাদীসে রাসুল (সা.) এ ব্যাপারে আরো বলেছেন, ‘রমজানের শেষ দশ দিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর।’
উল্লেখিত হাদীসের আলোকে যে বিষয়টি প্রতিয়মান হয়, তা হলো- নির্দিষ্টভাবে রমজানের কোনো একটি রাতকে শবে কদর বা লাইলাতুল কদর বলা যাবে না ।

বরং পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের যে কোনো একটি বেজোড় রাত শবে কদর বা লাইলাতুল কদর হতে পারে। তবে রমজানের ২৭তম রজনী অর্থ্যাৎ ২৬ রমজান দিবাগত রাতটি লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। কদরের রাত হওয়ার বিবেচনায় দ্বিতীয় সম্ভাবনাময় রাত হলো- ২৫ তারিখ। তৃতীয় হলো- ২৯ তারিখে। চতুর্থ হলো- ২১ তারিখ। পঞ্চম হলো- ২৩ তারিখের রজনী ।

বিজ্ঞ উলামাগণ বলেছেন, মহিমান্বিত এ রজনীটি স্থানান্তরশীল। অর্থাৎ প্রতি বৎসর একই তারিখে বা একই রজনীতে তা স্থির থাকে না। আল্লাহ মহানের হিকমত এবং তার ইচ্ছায় কোনো বছর ২৫ তারিখে, কোনো বছর ২৩ তারিখে, কোনো বছর ২১ তারিখে, আবার কোনো বছর ২৯ তারিখেও শবে কদর হয়ে থাকে।

২. শবে কদর কেন এতোটা গুরুত্বপূর্ণ ?

 
বোখারী ও মুসলিম শরীফে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখে তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সওয়াবের আশায় ইবাদত করবে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’

তাফসীরে মারেফুল কোরআন ও তাফসীরে মাজহারিতে উল্লেখ হয়েছে, ‘রাসুল (সা.) একবার সাহাবায়ে কেরামকে বনী ইসরাইলের একজন আবিদ ও জাহিদ ব্যক্তির আমল-আখলাকের ঘটনা শুনাচ্ছিলেন।

তিনি বলছিলেন, সেই আবিদ ব্যক্তি হাজার মাস বিরতিহীনভাবে সারারাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী, জিকির-আজকার করতেন এবং সারাদিন সিয়াম পালন করতেন ও আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করতেন।

সাহাবা আজমাইনরা ঐ ব্যক্তির আমলের বর্ণনা শুনে নিজেদের স্বল্প আয়ূর কথা স্মরণ করে আফসোস করছিলেন। এমন সময় সূরা কদর নাজিল হলো এবং তাতে ইরশাদ হলো- ‘হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হচ্ছে লাইলাতুল কদর।’ অর্থাৎ মাত্র একটি রাত না ঘুমিয়ে ইবাদত-বন্দেগী, জিকির-আজকারসহ বিভিন্ন নেক আমলে সময় কাটাতে পারলে হাজার মাস লাগাতার ইবাদত করার চেয়েও অনেক বেশি সওয়াব অর্জন করা সম্ভব হতে পারে।

এক হাজার মাস = ৮৩ বছর চার মাস। একটি রাত ইবাদাতে কাটানো সম্ভব হওয়া মানে ৩০ হাজার ৪১৫ দিন ও রাত ইবাদাতে মশগুল থাকার সাওয়াব-সৌভাগ্য অর্জন করা।

মাত্র একটি রজনী অর্থ্যাৎ মাগরিবের নামাজের পর থেকে ফজরের নামাজ পর্যন্ত আনুমানিক মাত্র ১০ থেকে সাড়ে ১০ ঘন্টা সময় আমল-ইবাদতে কাটানো সম্ভব হওয়া মানে ৭ লাখ ২৯ হাজার ৯৬০ ঘন্টা, ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৯৭ হাজার ৬০০ মিনিট অথবা ২৬ কোটি ২৭ লাখ ৭৬ হাজার সেকেন্ড লাগাতার আমল-ইবাদতে সময় ব্যয় করার নিশ্চিত সাওয়াব-সৌভাগ্য অর্জন করা।

মহিমান্বিত শবে কদর বা লাইলাতুল কদরে ১০ ঘন্টা আমল-ইবাদতে সময় কাটানো সম্ভব হওয়ার হিসেব মোতাবেক এ রজনীতে মাত্র ১ সেকেন্ড ইবাদাত করা মানে অন্য সময়ে ২০ ঘন্টা ইবাদতে কাটানো। এ রাতে মাত্র ১ মিনিট আমলে মশগুল থাকা মানে অন্য সময়ে ৫০ দিন লাগাতার আমলে মশগুল থাকার সমান।

মহিমান্বিত এ রজনীতে মাত্র ১ ঘন্টা আমল-ইবাদতে সময় ব্যয় করা মানে অন্য সময়ে ৮ বছর ৩৩ দিন বা ৭২ হাজার ৯৯৬ ঘন্টা আমল-ইবাদতে সময় ব্যয় করার সমান।

৩. কদরের রাত চেনার কোনো আলামত আছে কী ?

 
যে রাতটি লাইলাতুল কদর হবে সেটা চেনার কিছু আলামত বা কিছু নিদর্শনের কথা বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। বোখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ ও ইবনে খুমাইমাসহ বিভিন্ন হাদীসের গ্রন্থে এ রাতের মোট ১০টি আলামত বা নিদর্শনের কথা আলোচিত হয়েছে। সেগুলো হলো-

আলামত- ১: রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের শেষ দশ দিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ করো।’ এই হাদীস দ্বারা এ রাতটির তিনটি আলামত নির্ণিত হয়— ১. রাতটি রমজান মাসে হবে। ২. রমজানের শেষ দশকে হবে। ৩. শেষ দশকের বেজোড় রাত হবে ।

আলামত- ২: রমজানের শেষ সাত দিনে এ রাত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। রাসুল (সা.) থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করতে চায়, সে যেন রমজানের শেষ সাত রাতে তা অন্বেষণ করে ।’

আলামত- ৩: রমজানের ২৭তম রজনী অর্থ্যাৎ ২৬ রমজান দিবাগত রাতটি লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। মুসলিম শরীফে এসেছে, রাসুল (সা.) থেকে হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বর্ণনা করে বলেন, ‘আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যতদূর জানি রাসুল (সা.) আমাদেরকে যে রজনীকে কদরের রাত হিসেবে কিয়ামুল্লাইল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন; তা হলো- রমজানের ২৭ তম রাত।’

আলামত- ৪: রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না। অর্থাৎ এ রাতের অন্ধাকারচ্ছন্নতা অন্য রাতের তুলনায় কম হবে ।

আলামত- ৫: সে রাতের আবহাওয়া হবে নাতিশীতোষ্ণ। অর্থাৎ গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না সে রাতে।

আলামত- ৬: মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে গোটা রাত জুড়ে ।

আলামত- ৭: সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে ।

আলামত- ৮: কোনো ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ মহান স্বপ্নে রাতটির কথা হয়তো জানিয়েও দিতে পারেন ।

আলামত- ৯: ঐ রাতে বৃষ্টি বর্ষণও হতে পারে ।

আলামত- ১০: সে রাতের সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। সেদিন সকালের প্রথম সূর্যটি হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো ।

৪. বেজোড় রাত কোন কোনটি ?
বেজোড় রাত নির্বাচন নিয়ে আমাদের অনেকেই একটু বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। কারণ ইংরেজি ও বাংলা বর্ষপুঞ্জির হিসেবে দিন আগে ও রাত পরে। আর আরবি বর্ষপুঞ্জির হিসেব হলো- রাত আগে ও দিন পরে।

রাসুল (সা.)-এর হাদীসের বর্ণনা মতে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলো হলো— ২১তম, ২৩তম, ২৫তম, ২৭তম এবং ২৯তম রাত। এখন জানার বিষয় হলো- বেজোড় রাতগুলো কখন থেকে গণনা শুরু হয়? বেজোড় সংখ্যার রোজার পরবর্তী রাতটি কি বেজোড় রাত? না, বেজোড় সংখ্যার রোজার পরবর্তী রাতটি বেজোড় রাত নয়।

আরবি বর্ষপঞ্জীর নিয়ম মোতাবেক রাতের মাধ্যমে যেহেতু দিবস গণনার সূচনা হয় সেই মতে জোড় সংখ্যার রোজার পরবর্তী রাতটি হবে বেজোড় রাত। অর্থ্যাৎ ২০তম রোজার পরবর্তী রাত হবে ২১তম রজনী। ২২তম রোজার পরবর্তী রাত হবে ২৩তম রজনী। ২৪তম রোজার পরবর্তী রাত হবে ২৫তম রজনী। ২৬তম রোজার পরবর্তী রাত হবে ২৭তম রজনী এবং ২৮তম রোজার পরবর্তী রাত হবে ২৯তম রজনী ।

৫. নিশ্চিতভাবে শবে কদর লাভের কোনো আমল আছে কী ?

 
নিশ্চতভাবে শবে কদর লাভ করা অত্যন্ত সৌভাগ্যজনক একটি বিষয়। রমজানের কোন রাতটি শবে কদর বা লাইলাতুল কদর হবে সেটা যেহেতু নিশ্চিত বা সুচিহ্নিত নয় সুতরাং নিশ্চিতভাবে শবে কদর বা লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির দাবী করাও খুব কঠিন।

তবে রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার মাধ্যমে অনেকটাই নিশ্চিতভাবে মহিমান্বিত এই রজনীটি লাভ করা সম্ভব হতে পারে বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ। কারণ ইতিকাফ করার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হলো- শবে কদর প্রাপ্তি। সুতরাং রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার মাধ্যমে শবে কদর প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়।

৬. এ রাতে মুসলিম হিসেবে করণীয়, বর্জনীয় কী ?


করণীয়: মহিমান্বিত এ রজনীতে প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য করণীয় কিছু আমল রয়েছে। কারণ এ রাতটি বছরে একবারই আসে এবং একটি কদরের রাত পাওয়ার অর্থ হলো- হাজার মাস একনিষ্টভাবে মহান প্রভূর ইবাদত কাটানোর সৌভাগ্য অর্জন করা ।
সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের প্রথম করণীয় হলো- পবিত্র রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি বেজোড় রাত যেকোনো মূল্যে ইবাদত-বন্দেগীতে কাটানোর নিয়ম করে প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

দ্বিতীয় করণীয় হলো- প্রতিটি বেজোড় রাতে মাগরিব, ইশা এবং ফজরের নামাজ অবশ্যই জামাতের সঙ্গে মসজিদে আদায় করা ।
তৃতীয় করণীয় হলো- সালাতুত তাসবীহ ও বিভিন্ন নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকারসহ যে কোনো ধরনের নেক আমলে সময় কাটানো ।

চতুর্থ করণীয় হলো- বেশি বেশি তাওবা-দোয়া-মোনাজাত করা। তিরমিজি শরীফের ৩৫১ নং হাদীসে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘একদা আমি রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি কদরের রাত সম্পর্কে অবহিত হতে পারি; তবে আমি কি করব ?

তখন রাসুল (সা.) আমাকে এই দোয়া পাঠ করার জন্য বললেন। দোয়াটি হলো: (আরবি উচ্চারণ) ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি’। বাংলা অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন আপনি। অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।’

পঞ্চম করণীয় হলো- এ রাতে দান-সাদাকাহ করাকেও অধিক উত্তম বলা হয়েছে ।

একটি বিষয় এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ না করলেই নয়, তা হলো- পিরিয়ড চলাকালীন এই সময়ের হায়েজা নারীগণ এ রাতে কীভাবে আমল-ইবাদত করবেন? তারা কি তাহলে মহিমান্বিত এ রজনীর সাওয়াব-সৌভাগ্য অর্জন থেকে বঞ্চিত থাকবেন ?

না, অবশ্যই না। পিডিয়ডে থাকা বা হায়েজা নারীগণ এ রাতে যে কোনো ধরনের নামাজ ও কোরাআন তেলাওয়াত না করে জায়নামাজে বসে বেশি বেশি দোয়া-ইস্তিগফার-তাওবা ও জিকির-আজকার করতে পারবেন এবং দান-সাদাকাহও করতে পারবেন।

বর্জনীয়: সৌভাগ্যমন্ডিত এ রাতকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে মনগড়া কিছু আমলের প্রচলন ঘটেছে। প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের উচিত হবে মহিমান্বিত এ রজনীতে মনগড়া বিভিন্ন আমল-ইবাদত ত্যাগ করা। শবে কদরের নামাজ নামে মুসলিম সমাজে আলাদা ১২ রাকাত বা ২০ রাকাত নামাজের যে প্রচলন রয়েছে সেটা সম্পূর্ণ বিদআত। এ রাত উপলক্ষে আলাদা কোনো নামাজের বিধান ইসলামে নেই ।

এ রাতের গোটা সময়ই আপনি চাইলে নামাজে বা অন্য যে কোনো আমল-ইবাদতে কাটাতে পারবেন। কিন্তু নির্দিষ্ট রাকাতের শবে কদরের কোনো নির্দিষ্ট নামাজ নেই। বিভিন্ন বই-পুস্তকে শবে কদরের নামাজের যে বিধান ও নির্দিষ্ট সুরা পাঠের যে নিয়ম-কানুন বর্ণিত রয়েছে; সেগুলো শুদ্ধ নয়। হাদীস শরীফ থেকে এ ধরনের কোনো নিয়ম বা বিধানের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং এসব মনগড়া পন্থা পরিত্যাগ করে বেশি বেশি বিভিন্ন আমল-ইবাদত করা।

অনেক মুমিন-মুসলমান ভাই-বোন এ রাতে কবর জিয়ারত করে থাকেন। কদরের রাতে কবর জিয়ারত করার কোনো সহিহ বর্ণনা রাসুল (সা.) থেকে পাওয়া যায় না। সুতরাং ভালো হলেও লাইলাতুল কদরে কবর জিয়ারত করা থেকে বিরত থেকে অন্য আমল-ইবাদতে মশগুল থাকা অধিক উত্তম হবে।

এছাড়া বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসিলিম দেশে কদরের রাতে দল বেঁধে বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে ঘোরাঘুরিকরাসহ উৎসবমুখর বিভিন্ন আয়োজন পরিলক্ষিত হয়। প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানভাইদের একটি কথা গুরুত্বের সঙ্গে মনে রাখতে হবে, মহিমান্বিত লাইলাতুল কদরে অহেতুক কোনো আয়োজনে লিপ্ত না হয়ে গোটা রাতের প্রতিটি সেকেন্ড, প্রতিটি মিনিটি এবং প্রতিটি ঘণ্টা কোরআন-সুন্নাহয় বর্ণিত বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগীতে ব্যয় করার মাঝেই প্রকৃত সৌভাগ্য নিহিত ।

পরিশেষ রাসুল (সা.)-এর কিছু হাদীস স্মরণ করিয়ে দেই। ইবনে মাজাহ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘শবে কদর’ থেকে বঞ্চিত হলো; সে যেন সমগ্র কল্যাণ থেকে পরিপূর্ণ বঞ্চিত হলো ।’

আবু দাউদ শরিফে উল্লেখ আছে, হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘লাইলাতুল কদর’ পেল কিন্তু ইবাদত-বন্দেগীতে সময় কাটাতে পারলো না, তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই ।’

সুতরাং পবিত্র রমজানের মাসে লাইলাতুল কদর আপনার আমার দরজায় কড়া নাড়ছে। এ রাতটিকে খুঁজে আমল-ইবাদতে কাটিয়ে সৌভাগ্যবানদের তালিকাতে নাম লেখাবো নাকি হতভাগা থেকে যাবো; সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদেরকেই । 

More Info: ঈমানের হাকিকত প্রথম খন্ড


আমাদের কিছু কথা

বাংলায় লিখতে গিয়ে যদি কোনো ধরনের ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

এবং যদি আপনাদের কোন ধরনের সাজেশন থাকে তাহলে অবশ্য আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন

আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ

আমাদের এই পোস্টে ভিজিট করার জন্য

এবং যদি ভালো লাগে এই পোস্টটি তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

Post a Comment

0 Comments