তারাবি নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
তারাবি নামাজ পড়াকালে প্রতি দুই রাকাত বা চার রাকাত পরপর বিশ্রাম করার জন্য একটু বসার নামই 'তারাবি'। দীর্ঘ নামাজের কঠোর পরিশ্রম লাঘবের জন্য প্রতি দুই রাকাত, বিশেষ করে প্রতি চার রাকাত পর একটু বসে বিশ্রাম করে দোয়া ও তসবিহ পাঠ করতে হয় বলে এ নামাজকে 'সালাতুত তারাবিহ' বা তারাবি নামাজ বলা হয়।
More Infoঃ ঈমানের হাকিকত দ্বিতীয় খন্ড পাক কালেমা ও নাপাক কালেমা
শুরু হয়েছে রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান। এই মাসের প্রধান দুটি আমল হলো সিয়াম ও কিয়াম।
সিয়াম বা রোজা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, দাম্পত্য মিলন ও রোজা ভঙ্গ হওয়ার সকল বিষয় থেকে দূরে থাকা। আর কিয়াম হলো রাতে তারাবির নামাজ।
‘তারাবিহ’ শব্দটি আরবি তারভিহাতুন থেকে এসেছে, যার অর্থ বিশ্রাম করা, প্রশান্তি লাভ করা।
তারাবি নামাজে যেহেতু প্রতি চার রাকাত পর পর একটু বিশ্রাম নিয়ে তাসবিহ ও দোয়া পাঠ করা হয়, তাই এই নামাজকে সালাতুত তারাবিহ বা তারাবি নামাজ বলা হয়।
তারাবির নামাজ এশার ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর এবং বিতিরের পূর্বে আদায় করা হয়। তারাবির নামাজ সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। যেটা গুরুত্বের দিক থেকে ওয়াজিবের কাছাকাছি।
তারাবির ফজিলত সম্পর্কে
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকীর আশায় কিয়ামুল লাইল তথা তারাবি আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
রাসুল (সা:) তারাবিকে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তারাবি যেন ফরজ না হয়ে যায়, যেটা আদায়ে উম্মতের কষ্ট হতে পারে, সেটা রাসুল (সা:) এর একটি হাদিসে থেকেই বোঝা যায়।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) একবার রমজান মাসে রাত্রিবেলায় মসজিদে নববীতে নামাজ (তারাবি) আদায় করলেন। উপস্থিত লোকজনও তার সঙ্গে নামাজ আদায় করলেন। একইভাবে তারা দ্বিতীয় দিনেও নামাজ আদায় করলেন এবং লোকসংখ্যা অনেক বেশি হলো। অতঃপর তৃতীয় এবং চতুর্থ দিনেও মানুষ একত্রিত হলো। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (স.) হুজরা থেকে বেরিয়ে তাদের কাছে এলেন না।
অতঃপর সকাল হলে তিনি এলেন এবং বললেন, তোমাদের অপেক্ষা করার বিষয়টি আমি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু শুধু এ ভয়ে আমি তোমাদের নিকট আসা থেকে বিরত থেকেছি যে, আমার আশঙ্কা হচ্ছিল, না জানি তোমাদের ওপর উহা (তারাবি) ফরজ করে দেওয়া হয়। (বুখারী)
তারাবি বিশ রাকাত সুন্নাত। এটা রাসুল (সা:), সাহাবী, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন এবং মুজতাহিদ ইমামগণের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা:) রমজান মাসে বিশ রাকাত এবং বিতির পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা)
সমস্ত সাহাবীদের আমলও বিশ রাকাত ছিল। রাসুল (সা:) এর নাতি হযরত আলী ইবনে হাসান (রা:) থেকে বর্ণিত, হযরত ওমর (রা:) এর নির্দেশে লোকদেরকে নিয়ে উবাই বিন কাব (রা:) বিশ রাকাত তারাবি পড়েছেন। (আবু দাউদ)
এভাবে খলিফা ওমর, ওসমান, হযরত আলী (রা:) সহ সকল সাহাবীদের ঐক্যমতে বিশ তারাবি পড়া হয়েছে।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ:) বলেন, মক্কা ও মদীনা শরীফে সাহাবায়ে কেরামের যুগ হতে আজ পর্যন্ত সব সময় বিশ রাকাত তারাবি খতমে কোরআনসহ জামাতের সঙ্গে পড়া হয়। তারাবি নামাজে পূর্ণ কোরআন তেলাওয়াত বা শ্রবণ করা ও সুন্নত। রাসূল (সা:)বলেন, যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করবে সে একটি নেকী অর্জন করবে এবং একটি নেকীকে দশগুণ বৃদ্ধি করে প্রদান করা হবে। (তিরমিজি)
কুরআনে কারীম তেলাওয়াতের মতো শুনলেও একই রকম সওয়াব। এজন্য তারাবি নামাজে পরিপূর্ণ আদবের সাথে মনোযোগ দিয়ে কোরআন শুনতে হবে।
বিশ রাকাত না পড়ে ইমামকে রেখে মসজিদ ত্যাগ করা উচিত নয়। রাসুল (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত কিয়ামুল লাইল তথা তারাবি আদায় করবে, তার জন্য পুরো রাত সিয়াম পালনের সওয়াব লাভ হবে। (তিরমিজি)
করোনায় সবকিছু থমকে গেছে। সংক্রমণ এড়াতে মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়সহ অনেক কিছুতে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তারাবির নামাজে সর্বোচ্চ ১২ জন অংশ নিতে পারবে বলে নির্দেশনা দেয় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। যার কারণে মুসল্লিরা নিজ নিজ ঘরে এশা ও তারাবির নামাজ আদায় করছেন। সবাই ব্যক্তিগতভাবে তেলাওয়াত, জিকির ও দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর রহমত ও বিপদ মুক্তির প্রার্থনা করছেন।
মাহে রমজানের বিশেষ ফজিলত পূর্ণ আমল তারাবির নামাজে কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। আসুন আমরা যথাযথ গুরুত্বের সাথে তারাবির নামাজ আদায় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দান করুন।
হাদিস এবং সুন্নাহর আলোকে তারাবিহ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
তারাবিহ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত বিষয়ে আলোকপাত করতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় তারাবিহ নামাজ কি সেই বিষয়ে বলতে হয়। তাই তারাবিহ আলোচনার শুরুতে তারাবিহ নামকরণের কারণসহ কিছু বিষয় জেনে নিব ইনশাআল্লাহ।
নামাজের নাম 'তারাবিহ' যে কারণে
'তারাবিহ' নামাজে যেহেতু প্রতি চার রাকাআত পরপর একটু বিশ্রাম নিয়ে তাসবিহ ও দুআ পাঠ করা হয় তাই এই নামাজকে 'সালাতুত তারাবিহ' বা 'তারাবিহ নামাজ' বলা হয়।
রমজানের দুই আমল সিয়াম ও কিয়াম
রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান চলছে এখন। এই মাসের প্রধান দু'টি আমল হলো সিয়াম ও কিয়াম।
এর মধ্যে প্রথমটি অর্থাৎ, 'সিয়াম' বা 'রোজা' হলো, আল্লাহ তাআ'লার সন্তুষ্টির জন্য সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, দাম্পত্য মিলন ও রোজা ভঙ্গ হওয়ার অন্যান্য সকল বিষয় থেকে বেঁচে থাকা।
আর দ্বিতীয়তঃ 'কিয়াম' বা 'দন্ডায়মান হওয়া' দ্বারা বুঝানো হয় রাতের তারাবিহ নামাজকে। 'তারাবিহ' শব্দটি আরবি 'তারভিহাতুন' থেকে উৎপন্ন। এর অর্থ বিশ্রাম করা, প্রশান্তি লাভ করা।
তারাবিহর সময়
তারাবিহ নামাজ ইশার ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর এবং বিতিরের আগে আদায় করা হয় ।
তারাবিহ সুন্নাতে মুআক্কাদাহ
তারাবিহ নামাজ সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। যেটা গুরুত্বের দিক থেকে ওয়াজিবের কাছাকাছি ।
তারাবিহ নামাজের ফজিল
তারাবিহর ফজিলত সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 'যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকীর আশায় কিয়ামুল লাইল তথা তারাবিহ আদায় করবে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে।' (বুখারী ও মুসলিম)
রাসুলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারাবিহকে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন তা উপরোক্ত হাদিস থেকে বুঝা সহজ। উপরন্তু তারাবিহ নামাজ যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত নামাজ তা উপলব্ধি করা যায় নিম্নোক্ত হাদিস থেকে।
তারাবিহ নামাজ উম্মতের উপর ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এবং উম্মতের তা আদায়ে কষ্ট হতে পারে, এই চিন্তায় রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারাবিহ নামাজ জামাআতে না পড়ে একা একা ঘরে আদায় করেছেন, যা নিম্নোক্ত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-
হজরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার রমজান মাসে রাত্রিবেলায় মসজিদে নববীতে নামাজ তারাবিহ আদায় করলেন। উপস্থিত লোকজনও তাঁর সঙ্গে নামাজ আদায় করলেন। একইভাবে তাঁরা দ্বিতীয় দিনেও নামাজ আদায় করলেন এবং লোকসংখ্যা অনেক বেশি হলো।
অতঃপর তৃতীয় এবং চতুর্থ দিনেও মানুষ একত্রিত হলো কিন্তু রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুজরা থেকে বেরিয়ে তাদের কাছে এলেন না। অতঃপর সকাল হলে তিনি এলেন এবং বললেন, তোমাদের অপেক্ষা করার বিষয়টি আমি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু শুধু এ ভয়ে আমি তোমাদের কাছে আসা থেকে বিরত থেকেছি যে, আমার আশঙ্কা হচ্ছিলো, না জানি তোমাদের ওপর উহা (তারাবি) ফরজ করে দেওয়া হয়। (বুখারী)
তারাবিহ নামাজের রাকাআত
তারাবিহ ২০ রাকাআত সুন্নাত। এটা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে ইযাম, তাবে-তাবেঈন এবং মুজতাহিদ ইমামদের আমল দ্বারা এটি সুপ্রমাণিত।
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে ২০ রাকাআত এবং বিতির পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা)
সব সাহাবীদের আমলও ২০ রাকাআত ছিল। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাতি হজরত হাসান ইবনে আলী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, হজরত ওমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর নির্দেশে লোকদের নিয়ে উবাই বিন কাব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু ২০ রাকাআত তারাবি পড়েছেন। (আবু দাউদ)
এভাবে খলিফা ওমর, ওসমান, আলী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুমসহ সব সাহাবীদের ঐক্যমতে ২০ রাকাআত তারাবিহ পড়া হয়েছে।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মক্কা ও মদিনা শরীফে সাহাবায়ে কেরামের যুগ হতে আজ পর্যন্ত সবসময় ২০ রাকাআত তারাবিহ খতমে কোরআনসহ জামাতের সঙ্গে পড়া হয়। তারাবিহ নামাজে পূর্ণ কোরআন তেলাওয়াত বা শ্রবণ করাও সুন্নত।
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করবে সে একটি নেকী অর্জন করবে এবং একটি নেকীকে দশগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে।' (তিরমিজি)
কোরআনে কারীম তেলাওয়াতের নেয় শ্রবণ করাও একই সওয়াব। এজন্য তারাবিহ নামাজে পরিপূর্ণ আদবের সঙ্গে মনোযোগ দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত শুনতে হবে।
২০ রাকাআত না পড়ে ইমামকে রেখে মসজিদ ত্যাগ করা উচিত নয়ঃ
রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত কিয়ামুল লাইল তথা তারাবি আদায় করবে তার জন্য পুরো রাত সিয়াম পালনের সওয়াব লাভ হবে।' (তিরমিজি)
মুসল্লিদের থেকেও সচেতনতা কাম্য
বিগত কিছু দিন যাবত আতঙ্কিত বিশ্ববাসী। করোনা আতঙ্ক সবকিছুকে থামিয়ে দিয়েছে। থমকে গেছে আমাদের আচার-আচরণ এবং জীবনের অনেককিছুই। সংক্রমণ এড়াতে মসজিদে জামাআতে নামাজ আদায়সহ অনেক কিছুতে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে সতর্কতার জন্য। তারাবিহ নামাজে সর্বোচ্চ ১২ জন অংশ নিতে পারবে বলে নির্দেশনা দিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সকলের এই নির্দেশনা মেনে রমজানের আমলগুলো করা উচিত।
আলহামদুলিল্লাহ, এ কারণে দেশের অধিকাংশ মুসল্লি সচেতনতার পরিচয় দিয়ে নিজ নিজ ঘরে ইশা ও তারাবিহ নামাজ আদায় করছেন। এসময়ে সন্মানিত মুসল্লিবৃন্দদের অনুরোধ, ব্যক্তিগতভাবে তেলাওয়াত, জিকির ও দুআ দরুদের পরিমান বৃদ্ধি করুন। এসবের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআ'লার রহমত ও বিপদ মুক্তির প্রার্থনা করুন যেন আল্লাহ পাক অতি দ্রুত এই বিপর্যয়ের হাত থেকে গোটা বিশ্ববাসীকে মুক্ত করেন।
তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম, কত রাকাত পড়বেন, তারাবি নামাজের নিয়ত ও দোয়া
রমজান মাসের রাতে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই দুই রাকাত করে নামাজ আদায় করা হয়, একে ‘তারাবি নামাজ’ বলা হয়। আরবি ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। শরিয়তের পরিভাষায় মাহে রমজানে তারাবি নামাজ পড়াকালীন প্রতি দুই রাকাত অথবা চার রাকাত পরপর বিশ্রাম করার জন্য একটু বসার নামই ‘তারাবি’।
তারাবির নামাজের নিয়ত
نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر
উচ্চারণ : নাওয়াইতুআন উসালিয়া লিল্লাহি তাআলা, রাকাআ’তাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআ’লা মুতাওয়াযজ্জিহান ইলা যিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার। (যদি জামাআতের সহিত নামাজ হয় তবে- ইক্বতাদাইতু বি হাজাল ইমাম বলতে হবে)।
অর্থ : আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাআ’ত তারাবিহ সুন্নাত নামাজ আল্লাহর জন্য আদায়ের নিয়্যত করছি, আল্লাহু আকবার। (যদি জামাআ’তের সহিত নামাজ হয় তবে- এই ইমামের ইমামতিতে জামাআ’তের সহিত)।
যাদের আরবী উচ্ছারণ করতে সমস্যা হয় অথবা পড়তে পারেন না, তারা বাংলায় নিয়ত করতে পারবেন।
তারাবির নামাজের সহীহ নিয়ম
এশা’র চার রাকাত ফরজ নামাজ ও ২ রাকাত সুন্নত আদায় করার পর এবং বিতর নামাজের আগে তারাবীহ্ নামাজ আদায় করতে হয়।
একনজরে
এশার দুই রাকাত সুন্নাত।
দুই রাকআত দুই রাকআত করে তারাবির সালাত।
এশার তিন রাকাত বেতের।
তারাবি নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া
سبحان ذى الملك والملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبة والقدرة والكبرياء والجبروت . سبحان الملك الحى الذى لاينام ولا يموت ابدا ابدا سبوح قدوس ربنا ورب الملئكة والروح.
উচ্চারণ : সুব্হানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুব্হানাযিল ইয্যাতি, ওয়াল আয্মাতি, ওয়াল হাইবাতি, ওয়াল কুদরাতি, ওয়াল কিবরিয়াই, ওয়াল যাবারুত। সুব্হানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা-ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।
– প্রত্যেক দুই রাকাআ’ত পর সালাম ফিরানোর পর ইসতেগফার পড়তে হয়, দুরুদ পড়তে হয়, আল্লাহর স্মরণে জিকির করতে হয়। তারপর চার রাকাআ’ত হলেও কুরআন হাদিসের দুআ’গুলো পড়া হয়; যে দুআ’গুলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পড়া হয়।
কিন্তু তারাবির যে দুআ’টি বর্তমানে জারি আছে, এই দুআ’টি কোরআন-হাদিস সম্বলিত নয়; এটিও কোনো এক বুজুর্গ ব্যক্তি লিখে এর প্রচলন করেছেন, যার অর্থও ভালো বিধায় আমরা পড়ে থাকি।
তারাবি নামাজের ফজিলত
রমজান মাসে তারাবি নামাজের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমান ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে পুণ্য লাভের আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তাঁর জীবনের পূর্বের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
তারাবির নামাজ বিষয়ক প্রশ্ন-উত্তর
প্রশ্ন : তারাবির নামাজ কত রাকাত ?
উত্তর : তারাবির সালাত দুই রাকআত দুই রাকআত করে যেকোনো সংখ্যক রাকআত পড়া হয়। কত রাকাত হবে, রাসুলুল্লাহ (স.) তা নির্ধারণ করে যাননি। হানাফি, শাফিয়ি ও হাম্বলি ফিকহের অনুসারীগণ ২০ রাকআত, মালিকি ফিকহের অনুসারীগণ ৩৬ রাকআত এবং আহলে হাদীসরা ৮ রাকআত তারাবির নামাজ পড়েন।
প্রশ্ন : তারাবির নামাজ কি সুন্নত না নফল ?
উত্তর : তারাবির নামায নারী-পুরুষ সকলের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
প্রশ্ন : খতম তারাবীহ এবং সূরা তারাবীহ কি ?
উত্তর : বাংলাদেশে তারাবীহর নামাজের দুটি পদ্ধতি প্রচলিত। একটি খতম তারাবীহ আর অন্যটি সূরা তারাবীহ। খতম তারাবীহর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কুরআন পাঠ করা হয়। খতম তারাবীহর জন্য কুরআনের হাফিযগণ ইমামতি করেন। সূরা তারাবীহর জন্য যেকোন সূরা বা আয়াত পাঠের মাধ্যমে সূরা তারাবীহ আদায় করা হয়।
আপনার জিজ্ঞাসা
তারাবির নামাজ ২০ না ৮ রাকাত ?
প্রশ্ন : আমাদের কোনো কোনো মসজিদে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়া হয় আবার কোনো কোনো মসজিদে ৮ রাকাত পড়া হয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যারা ৮ রাকাত পড়েন তাঁরা বলেন, রাসুলুল্লা (স.) কখনো ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়েননি। আমি জানতে চাচ্ছিলাম তারাবির নামাজ কোনটা সঠিক, ২০ রাকাত না ৮ রাকাত?
উত্তর : আপনি তারাবির নামাজ ২০ রাকাতও পড়তে পারেন। এটি ওলামায়েকেরামের বক্তব্য রয়েছে এবং এ বিষয়ে সাপোর্ট রয়েছে এবং এর পক্ষে দলিলও রয়েছে। ৮ রাকাতও আপনি পড়তে পারেন। ৮ রাকাতের বিষয়ে ওলামায়েকেরামের ইস্তিহাদ রয়েছে তারাবির সালাতের বিষয়ে।
আপনি যে কথা বলেছেন, রাসুলুল্লা (স.) কখনো তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়েননি, এ কথা সত্য বলেছেন। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কোনো সহিহ হাদিসের মাধ্যমে এটি সাব্যস্ত হয়নি রাসুলুল্লাহ (স.) ২০ রাকাত পড়েছেন।
প্রশ্ন : তারাবির নামাজ আসলে কী? আমরা কি এটিকে সালাতের সঙ্গে তুলনা করব ?
উত্তর : তারাবির সালাত এক ধরনের নফল সালাত। এটির নির্দিষ্ট কোনো সালাতের কথা বলা হয়নি, দুই রাকাত করে ৮ রাকাত, ১০ রাকাত, ১২ রাকাত, ১৬ রাকাত, ২০ রাকাত, ২৪ রাকাত, ৩০ রাকাত যার যতটুকু সমর্থ রয়েছে তিনি ততটুকু পড়বেন।
তারাবির সালাত মূলত রাতের নামাজ এবং রাতের নামাজের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নির্দেশনা হচ্ছে দুই রাকাত, দুই রাকাত করে আদায় করা। কত রাকাত, রাসুলুল্লাহ (স.) তা নির্ধারণ করে যাননি। কেউ যদি ২০ রাকাত পড়েন তাহলে পড়তে পারেন, কেউ যদি ৮ রাকাত পড়েন তাহলে সেটাও পড়তে পারেন।
এই রমজানে কুরআন-হাদীস বেশি বেশি অধ্যয়ন করুন। বেশি বেশি করে রমজান সম্পর্কিত ইসলামী বই পড়ুন। এবং কুরআন-হাদীস মোতাবেক আমলী জিন্দেগী যাপন করে রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন।
পরিশেষেঃ
মাহে রমজানের বিশেষ ফজিলত পূর্ণ আমল তারাবিহ নামাজ আদায়ে কোনোভাবেই অবহেলা নয়। আসুন, আমরা যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে তারাবিহ নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদেরকে তাওফিক দান করুন।
More Info: নেক আমল কাকে বলে
আমাদের কিছু কথা বাংলায় লিখতে গিয়ে যদি কোনো ধরনের ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং যদি আপনাদের কোন ধরনের সাজেশন থাকে তাহলে অবশ্য আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের এই পোস্টে ভিজিট করার জন্য এবং যদি ভালো লাগে এই পোস্টটি তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। |
0 Comments
Please Don't Send Any Spam Link