হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী - জঘন্য অপবাদ - Part 15 - Islamic History

 হযরত আয়েশা সিদ্দিকা ( রাঃ) জীবনী বই

জঘন্য অপবাদ

মদিনায় হিরতের কারণ ছিল নানা পর্যায়ে। আল্লাহ নির্দেশ, তদুপরি মক্কার কাপেরদের অত্যাচার যখন চরমে পৌঁছে, তখন বাধ্য হয়ে মুসলমানগণ আপন মাতৃভূমি ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করলেন। মদীনায় এসে যদিও কাফেরদের অত্যাচার হতে রেহাই পেলেন কিন্তু তারা বিভিন্ন ধরনের বিপদের সম্মুখীন হলেন।

এখানে কাফের এবং মুনাফিক সমবেতভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক অভিনব কায়দায় ষড়যন্ত্র শুরু করল। তা কোন অবস্থায়ই মক্কার নিপীড়ন হতে। কম ছিল না। এখানে মুহাজিরগণ আনসার ভাইদের কাছে যথেষ্ট সাহায্য পেলেন। তাঁদের থাকা কাওযার কোন ভাবনা নেই। প্রাণে মারিবার জন্য কোন শত্রু আক্রমণ করতে পারে এ চিন্তা হতেও তাঁরা মােটামুটি নির্ভয় হয়েছেন।

কিন্তু এইখানে একদল লােক মুসলমানগণের পিছনে এমনভাবে উঠে-পড়ে লাগল, কিভাবে মুসলমানগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি, কিভাবে তাঁদের মান-মর্যাদায়।
আঘাত হানতে পারে, কিভাবে তাদের মধ্যে ভাঙ্গন ধরাতে পারে এই ছিল তাদের।
লক্ষ্য। কাজেই তাদের এই হীন ষড়যন্ত্র কোন মতেই মক্কার অত্যাচার হতে ক্ষুদ্র।
বলা যায় না।

এই ষড়যন্ত্রকারী দলটির নােত ছিল আবদুল্লাহ ইবনে উবা। তারা প্রকাশে ইসলাম ও মুসলমানদের খুব সম্মান করত। এমনকি তাদের হে কেহ ইসলাম কবুল করে বাহ্যিকবাবে মুসলমান সাজল। তবে তাদের কপটতা সম্বন্ধে অনেকেই সন্দেহ করত। তারা কয়েকবার মুসলমানদের আত্মমর্যাদার উপর এমন হীন প্রচারণা রটিয়েছিল, যার পরিণতি হিসেবে খুনাখুনি হওয়াও বিচিত্র ছিল না।

কিন্তু আল্লাহ পাক প্রতিবারই তাদের গােপন ষড়যন্ত্রের কথা তাঁর নবীকে জ্ঞাত। করিয়ে দিতেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আনসার ও মুহাজিরগণকে মুনাফিকদের প্ররােচনা ও হীনমন্যতা হতে সাবধান করতে এবং নিজেদের মধ্যে যাতে কোন প্রকার মনােমালিন্য ও হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি হতে না পারে তৎপ্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হতে উপদেশ দিতেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উপদেশ বাণীত মুসলমানগণ সতর্ক হলেন বটে, কিন্তু মুনাপিকদের ষড়যন্ত্র বন্ধ হল না।

পঞ্চম হিজরীর সাবান মাসে নবী করীম (সাঃ) দল-বলসহ নবী সুস্তালিকের যুদ্ধ হতে মদীনা অভিমুখে যাত্রা করলেন। হযরত আয়েশা (রাঃ)-ও তাদের সাথে। রয়েছেন। রাত্রি অধিক হওয়ায় কাফেলা যাত্রা বিরতি করল। নিরাপদ স্থান দেখিয়ে তাঁবু ফেললেন। রাত্রি অধিক হওয়ায় কাপেলা যাত্রা বিরত করল।

নিরাপদ স্থান দেখিয়ে তাঁবু ফেললেন

রাত্রি শেষে আবার মদীনার পথে চলবেন।। ভাের হবার বেশী দেরী নাই। পুনঃ কাফেলা তাবু তুলল। সূর্যের প্রখর তেজ আরম্ভ হবার পূবেই মরুভূমি পার হয়ে যাওয়াই তাদের লক্ষ্য। হাওদা যে সময় উটের উপর উঠান হল ঐ সময় হযরত আয়েশা (রাঃ) প্রাকৃতিক প্রয়ােজনে হাওদার বাহিরে গিয়েছিলেন। হালকা-পাতলা হযরত আয়েশা যে হাওদার ভিতর নাই হাওদা উত্তোলনকারী সাহাবী তা অনুভবই করলেন না।

কাফেলা যাত্রা শুরু করেছে

হযরত আয়েশা (রাঃ) প্রয়ােজন সারিয়ে হাওদার দিকে আসছেন এমন সময় দেখলেন তাঁর গলার হারখানি নাই। তিনি আবার হারের খোঁজে সেদিকে গেলেন। হার তাঁকে খুঁজে বের করতেই হবে। তাই পদচিহ্ন লক্ষ্য করে তিনি একটু দূরে চলে গেলেন এবং তার খোজায় ব্যস্ত রইলেন। অনেকক্ষণ খোজাখুজির পর হার পাওয়া গেল। এবার তিনি শিবিরের স্থলে এসে দেখলেন, সেখানে শিবিরের নাম-নিশানাও নাই। কাফেলা বেশ আগেই চলে গিয়েছে।

হযরত আয়েশা (রাঃ) এ অবস্থায় একটু বিচলিত হয়ে পড়লেন। এদিকে ঊষার আলােও দেখা দিয়েছে। তিনি ভাবনা-চিন্তা পরিহার করে উত্তমরূপে গায়ে। চাদর জড়িয়ে শিবিরশূন্য স্থানে জড়সড় হয়ে বসলেন। তার এই মনােবল ছিল যে, হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) শূন্য হাওদা দেখিযে শ্রীই তার জন্য লােক পাঠায়ে দিবেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিয়ত করে দিয়েছেন যে, প্রত্যেক কাফেলায়ই একজন করে তােক নির্দিষ্ট থাকবে। তার কর্তব্য হবে কাফেলা চলে যাওয়ার পর তাঁদের কোন জিনিসপত্র ভুলবশতঃ ফেলে গেলে তা তালাস করে তুলে নেয়া। এই অভিযানেও তার ব্যতিক্রম হল না। এবারের যাত্রায় সে দায়িত্ব অর্পিত হল। সাফওয়ান নামীয় এক সাহাবীর উপর। ভােরের আলাে চতুর্দিক আলােকিত হচ্ছে। আপন কর্তব্যে সাহাবী সাফওয়ান এগিয়ে আসলেন।

তিনি দেখলেন, অদূরেই কি একটি কাল বস্তু দেখা যাচ্ছে। তিনি সেদিকে এগিয়ে গেলেন। পর্দার। আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে সাহাবী সাফওয়ান হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে দেখিয়েছিলেন। তাই চাদর মুড়ি দেয়া অবস্থায় হলেও সাফওয়ানের পক্ষে তাঁকে। চিনতে বিলম্ব হল না। তাকে দেখিয়েই সাফওয়ান বলে উঠলেন, “ইন্ন লিল্লাহি অ ইন্না ইলাইহি রাজিউন।” তার কথার আওয়াজ শুনে হযরত আয়েশা চমকিয়ে উঠলেন।

হযরত সাফওয়ান (রাঃ) তাঁর উট বসিয়ে দিলে হযরত আয়েশা উটে উঠলেন। হযরত সাফওয়ান উটো লাগাম ধরে কাফেলার সাথে মিলিত হবার। জন্য দ্রুত গতিতে অগ্রসর হলেন। বেলা দ্বিপ্রহরের সময় তিনি কাফেলার সাথে মিলিত হলেন। তখন কেবলমাত্র কাপেলা মঞ্জিলে পৌছিয়ে তাঁবু ফেলবার। আয়ােজন করতেছে।

অধুনা যাতায়াত ব্যবস্থায় অরম উন্নতি ঘটিয়ে বিজ্ঞান যে সুযােগ সৃষ্টি করেছে তা অবিস্মরণীয়। এই অবস্থায়ও মাঝে-মধ্যে উক্তরূপ ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকে।
অনেক সময় গন্তব্য ভুল করে অনেক শিশু, নারী স্বজন হতে বহু দূরে ছিকিয়ে। পড়ে। এরূপ ভুল-ভ্রান্তি স্বাভাবিক। যে কোন সময় ইহা সংঘটিত হতে পারে।

মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ ইবেন উবাই অনেকদিন যাবত এমন একটি সুযােগেরই প্রতীক্ষা করতেছিল। কারণ তার মূল শত্রুতার লক্ষ্যস্থল হযরত আবুবরক ও হযরত ওমর ফারুক (রাঃ)। কারণ তাঁরা আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে। তাঁদের ধারে-কাঝেও ঘেঁষতে দিতেন না। তাই প্রতিশােধ নেয়ার মত উপযুক্ত।

একটি সুযােগ পেয়ে বসল। সে মদীনায় প্রচার করে দিল, “হযরত আয়েশা। (রাঃ) আর সচ্চরিত্রা নহেন।” খারাপ সংবাদ বাতাসের আগে চলে তাই এই সংবাদ মদীনায় পৌছিতে একটুও বিলম্ব হল না। মুসলমানদের নিকট এ সংবাদ পৌছামাত্র তারা কানে আঙ্গুল দিয়ে বসে পড়লেন। আর বলে উঠলেন-“আল্লাহ পবিত্র এবং ইহা একটি জঘন্য অপবাদ।”

প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আবু আইউব আনছারী মদীনায় পৌছিয়ে স্বীয় স্ত্রীকে। জিজ্ঞাসা করলেন, “হে উম্মে আইউব! তােমার সম্বন্ধে কেহ এরূপ অপবাদ রটালে। তুমি কি করতে?” তিনি উত্তর করলেন, আল্লাহর নিকট তওবা করতেছি। কোন। সম্ভ্রান্ত মহিলা দ্বারা এমন জঘন্য ও হীন কাজ হতে পারে না। হযরত আবু আইউব আনছারী বললেন, “ভেবে দেখ, হযরত আয়েশা (রাঃ) তােমা অপেক্ষা। অনেক সম্ভ্রান্ত।

কাজেই তার দ্বারা এমন কাজ কোন সময়ই সম্ভব নহে। এটা কেবল তাঁর প্রতি জঘন্য অপবাদ ছড়াবার জন্য হিংসুকেরা করেছে।” [ আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ব্যতীত আরও তিনজন এই মারাত্মক ঘটনার সহিত যােগ দিল। তারা হচ্ছেন- কবি হাসসান ইবেন সাবেত, হামনাহ বিনতে জহশ ও মাসতাহ ইবনে আছাছাহ। এরূপ অপবাদ রটিবার পিছনে হাসসান ও হামনার একটা গােটন উদ্দেশ্য নিহিত ছিল। কিন্তু মাসতাহ কেন এই ষড়যন্ত্রে জড়িত হল তাই সকলকে বিস্মিত করেছে।

কারণ মাসতাহ হযরত আবুবকরেরই আত্মীয়। বিশেষতঃ এক সময় তিনি আবুবকর (রাঃ)-এর অন্নেই প্রতিপালিত হয়েছিলেন। | কবি হাসসান ইবেন সাবেতের এই অপবাদ প্রচার করে হযরত আয়েশাকে হেয় করা আসল উদ্দেশ্য ছিল না। তার লক্ষ্য ছিল সাফওয়ানকে ঘায়েল করা। কারণ সাফওয়ান তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তারা উভয়ে একই মহল্লায় বসাবস করত। অথচ হাসসান অপেক্ষা সাফওয়ান ছিলেন অধিক সম্মানিত। উপরন্তু তাঁরা। বের হতে মদীনায় এসে স্থায়ী অধিবাসী অপেক্ষা অধিক সম্মান লাভ করেব ইহাই তার ঈর্ষার কারণ।

তার রচিত কবিতায় এর কারণটি স্পষ্ট। সে লিখেছে, “তারা। সম্মানিত ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হয়েছে, আর ফারিয়ার পুত্র হাসসান অপদস্থ । হয়েছে।”হাসসান কর্তক এ অপবাদের খবর জানতে পেরে হযরত সাফওয়ান ক্রোধে। ফেটে পড়লেন। তাকে হত্যা করবার জন্য তিনি একখানা তরবারি নিয়ে বের হয়ে। পড়লেন। অতঃপর হাসসানের উপর আঘাত করে তিনি ছন্দে একটি বাক্য।

উচ্চারণ করলেন। যার অর্থ- আমি এখনও পূর্ণ যুবক, মিথ্যা অপবাদ আমি সহ করতে পারি না। আস, সুতীক্ষ তরবারির সম্মুখে এসে মােকাবেলা কর । আমি তােমার মত কবিতা লিখে বেড়াই না। জনতা ক্রুদ্ধ সাফওয়ানকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট নিয়ে গেলেন। সাফওয়ান তাকে এই মিথ্যা অপবাদের জন্য। ক্ষাম করলেন এবং কিছু অর্থ প্রদান করে দিলেন।

হামনাহ বিনতে জহশ হচ্ছে উম্মুল মু'মিনীন হযরত যয়নব (রাঃ)-এর। সহােদরা। এই জঘন্য অপবাদ রটনার কারণ হল-হযরত আয়েশা তার সহােদরা যয়নবের সপত্নী। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট আয়েশার আদর যয়নব অপেক্সা বেশি। তাই সহােদরার প্রতিদ্বন্দ্বীর নামে অপরবাদ রটালে যয়নব তার স্থান দখল করতে পারবেন। কেননা রূপে ও গুণে-জ্ঞানে তিনি হযরত আয়েশার চেয়ে কোন অংশেই কম নহেন। এই উদ্দেশ্য সামনে রেখেই হামনাহ এ কাজে প্রবৃত্ত হয়েছে।

এ ব্যাপারে মুসলমানগণ বিশেষভাবে মর্মাহত হলেন। কিছু সংখ্যক দুর্বল ঈমান সম্পন্ন মুসলমান কুৎসাকারীদের কথায় বিভ্রান্ত হল। মােটকথা, সারা মদীনায় এ অপবাদের ব্যাপারে একটা গুঞ্জরণের সৃষ্টি হল। অথচ হযরত আয়েশা (রাঃ) এর বিন্দুমাত্র জানতে পারেন নাই। একটা অভাবনীয় ঘটনার প্রেক্ষিতে। ঘটনাটি জ্ঞাত হলেন। একদিন কোনও বিশেষ প্রয়ােজনে তিনি মাসতার মায়ের। সাথে বাহিরে কোথাও যাচ্ছিলেন।

পথিমধ্যে মাসতার মা একটা হোঁচট খেয়ে আঘাত পেল। এ আঘাত পেয়ে সে বলে উঠল, “মাসতাহ নিপাত যাক।” এ উক্তি শুনে হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেন, ‘মাসতাহ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর একজন বিশ্বস্ত সাহাবী, আপনি তাকে অভিশাপ দিতেছেন, ইহা বড়ই খারাপ। কথা।” ইহার উত্তরে মাসতাহর মা বলল-“সে মিথুক ও হীন।” অতঃপর মাসতার মা সমস্ত ঘটনা তাঁর নিকট আদ্যোপান্ত খুলে বলল। তার মুখে এই কথা শুনে হযরত আয়েশা একেবারে নিশ্চল পাথরের ন্যায় হয়ে গেলেন। তার। পায়ের নিচের মাটি যেন সরে গেল।

এই সময়কার বনা দিয়ে হযরত আয়েশা (রাঃ) নিজেই বর্ণনা করেছেন যে, “এই কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। যেই কাজে বের হয়েছিলাম তাম সমাধা না করে আমি ঘরে ফিরে আসলাম।” মাসতাহর মায়ের নিকট কথাটি শুনে হযরত আয়েশা (রাঃ) কোন মতেই বিশ্বাস। করতে পারলেন না। এদিকে এমন একটি জঘন্য কথা কিভাবে কোথা হতে এবং কেনই বা রটল, তা নিয়ে চিন্তা করতে লাগলেন। সেই রাতেই তিনি পিত্রালয়ে।

চলে আসলেন এবং মায়ের নিকট কথাটি জানতে চাইলেন। মা মেয়েকে কোন কাই না বলে কেবল মাত্র সান্ত্বনার বাণী শুনালেন।
অল্প সময় পরেই জনৈক আনসার মহিলা এসে তার সম্মুখেই কথাটি পুরাপুরিভাবে ব্যক্ত করল। এবার কথাটি শুনে হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর কোন সন্দেহই রইল না। তিনি বেহুশ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। হযরত আবুবকর (রাঃ) ও মাতা রুমান বহু সেবা-শুশ্রুষা করে তাঁকে স্বাভাবিক করে তুললেন। জনক-জননী তাকে নানাভাবে প্রবােধ দিলেন এবং পতিগৃহে পাঠিয়ে দেন। এখানে এসেই তিনি ভীষণভাবে জ্বরে আক্রান্ত হলেন।

তার জ্বরের সংবাদ শুনে হুযুর (সাঃ) ঘরে প্রবেশ করে তার শারীরিক অবস্থা। জিজ্ঞাসা করে চলে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর এই বাব লক্ষ্য করে হযরত আয়েশা (রাঃ) আরও অধীর হয়ে পড়লেন। তার মানসিক অবস্থার চরম অবনতি হল। তিনি এক মুহূর্তও আর স্বামীগৃহে তাকতে পারলেন না। অবশেষে নবী।

করমী (সাঃ)-এর অনুমতি নিয়ে পুনঃ পিত্রালয়ে গেলেন। স্বামীর এহেন উদাসীন ভাব এবং আত্ম-সম্মানের উপর অপবাদের আঘাতে তিনি লজ্জা ও অপমানে একেবারেই ভেঙ্গে পড়লেন। দিন-রাত কেবল কেঁদে কাটাতেন। তাঁর অবস্থা। দেখে তাঁর মাতা তথাকে নানাভাবে সান্ত্বনা দিলেন। তাঁরা তাঁকে দুষ্কৃতকারীদের অপবাদে ধৈর্যহারা না হবার উপদেশ দিলেন। কারণ পতিপ্রাণা রমণীগণের অনেক সময় এরূপর দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হওয়া স্বাভাবিক, এতে উদ্বিগ্ন হবার কারণ নেই।

কোন প্রবােধ বাক্যেই হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর প্রাণে শান্তি আসল না; বরং এক পর্যায়ে তিনি ধৈর্যহারা হয়ে পানিতে ডুবে প্রাণ বিসর্জন দিতে। চেয়েছিলেন। তিনি এ অবস্থার বর্ণনা দিয়ে বলতেছেন যে, “কোন সময়ের জন্যই আমার চোখের পানি বন্ধ হত না। দ্রিা আমার কাছ হতে বিদায় নিয়েছিল”।

হযরত আয়েশার চারিত্রিক পবিত্রতার ব্যাপারে হুযুর (সাঃ)-এর মনে। একবিন্দু সন্দেহও ছিল না। হযরত আয়েশা (রাঃ) ছিলেন সম্পূর্ণ পবিত্র ও নির্দোষ। তবু শত্রুদের এই জঘন্য অপবাদের ব্যাপারে লােকের মধ্যে যে ভাবের। সৃষ্টি হয়েছে তা রােধ করতে এবং সত্য ঘটনা উদঘাটন করে দেকা তিনি। প্রযােজন বােধ করলেন। তাই তিনি বিষয়টি হযরত আলী (রাঃ) বললেন, ইয়া । রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! দুনিয়ায় নারীর কোন অভাব নাই। মানুষের মতামতের প্রতি রক্ষ্য না করে আপনার মত তাঁর উপর সন্দেহ পোেষণ করলে তাকে পরিত্যাগ

করে আজই আর একটি বিবাহ করুন।

আর প্রয়ােজন বােধ করলে পরিচারিকার নিকট তাঁর চরিত্রের বিষয় খোঁজ নিন। সে তার চরিত্রের ব্যাপারে পূর্ণ বিবরণ দিবে। সে সত্য গােপন করবে না।

হযরত আলী (রাঃ)-এর পরামর্শ অনুযায়ী হযরত আয়েশার পরিচারিকা বারিরাকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইঙ্গিতে কথাটি জিজ্ঞাসা করলেন। সে মনে করল, নবী করীম (সাঃ) তার সংসার কর্ম সম্বন্ধে জানতে চেয়েছেন, তাই বলল- তাঁর কোন দোষই আমি লক্ষ করি নাই। তবু বয়স অল্প বলে কখনও কখনও কাজের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েন। ফলে প্রতিবেশির বকরী আটা ইত্যাদি খেয়ে যায় ।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দেখলেন, পরিচারিকা তার ইঙ্গিত বুঝে নাই। অতএব, খােলাখুলিভাবেই তাঁর নিকট হযরত আয়েশার চরিত্রের ব্যাপারে জিজ্ঞাস করলেন। এই কথা শুনে বারিরাহ অবাক হয়ে বলেন-“সুবহান আল্লাহ্, বলতে পারে, আমিও হযরত আয়েশার চরিত্রের বিষয় অবগত আছি। তার মধ্যে কৃত্রিমতার লেশমাত্র নাই।”

কোন কোন রেওয়ায়েতে উল্লেখ রয়েছে,

দাসীর নিকট হতে সত্য কথা বের করবার জন্যে হযরত আলী (রাঃ) চাপ সৃষ্টি করলেন, এমন কি এক পর্যায়ে তিনি দাসীকে প্রহারও করেছিলেন। কেউ কেউ ধারণা পােষণ করে যে, হযরত আলীর এহেন রূঢ় ব্যবহারের পরিণতি হিসেবেই হযরত আয়েশা (রাঃ) তাঁর প্রতি বিরূপ। ভাব পােষণ করতেন। বনী উম্মিয়ার রাজত্বকালে হযরত আলীর বিরুদ্ধে তারা যে। সকল অপবাদ প্রচার করেছিল এর মধ্যে এটা অন্যতম। তবে ইমাম যুহরী এই বর্ণনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। কেননা তাঁর মতে এটা ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

উম্মুল মু'মিনীনগণের মধ্যে হযরত যয়নবই কেবল হযরত আয়েশার সমমর্যাদার দাবী করতেন। বিশেষতঃ তাঁরই সহােদর বােন হামনাও বােনের প্রতিদ্বন্দ্বীকে হেয় করবার জন্য দুষ্টদের সাথে মিথিল হয়েছিল, তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর চরিত্রের ব্যাপারে যয়নবের মতামত জেনে। নেয়া প্রয়ােজনবােধ করলেন। নবী করীম (সাঃ) হযরত যয়নবকে এ বিষয়। জিজ্ঞাসা করলেন। একথা শুনে তিনি কানে হাত দিয়ে সবিস্ময়ে বললেন-“আমি। তর মধ্যে ভাল ব্যতীত মন্দ কোন কিছুই দেখি নাই।”

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মসজিদে নববীতে সাহাবাগণকে সমবেত করে তাদের নিকট নবী পরিবাররে পবিত্রতা ও শালীনতার প্রতি আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই কর্তৃক জঘন্য অপবাদের বিষয় ব্যক্ত করে এর প্রমিয়ােদর জন্য ঘােষণা করলেন প্রিয়। সাহাবাগণ! শয়তান আব্দুল্লাহ বিন উবাই এবং সঙ্গীগণ নবীর হােরেমের পবিত্রতার বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার রটিয়েছে এর প্রতিকার দরকার, কে আমার হয়ে তাকে শাস্তি দিতে পারবে?

তাঁর বক্ত্য শুনেই আউস গােত্রপতি হযরত সাআদ ইবনে মাআয জনতার মধ্য হতে দণ্ডায়মান হয়ে আরজ করলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি সেই পাপিষ্ঠ। শয়তানকে শাস্তি দিতে তৈয়ার আছি। আমি তার গর্দান দ্বিখণ্ডিত করতে প্রস্তুত, সে আমার গােত্রের লােক হলেও আমি তকে ছাড়বা না। এমনকি, সে যদি আমার ভ্রাতবংশীয় খাজরাজ গােত্রের লােকও হয় তবু সে আমার হাত হতে রােহাই পাবে না।

আউস ও খাজরাজ গােত্রের মধ্যে বহু পূর্ব হতেই কলহ বিদ্যমান ছিল। হযরত মাআয ইবেন জাবাল-এর উদাত্ত ঘােষণায় খাজরাজ দলপতি সা’আদ ইবনে ইবাদাহ তাঁর কথার প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠল। সে বলল, “আপনার। গােত্রের বিষয় আপনার যা ইচ্ছা বলতে পারেন, অন্যের ব্যাপারে আপনার করবার কিছুই নাই।” এভাবে বাদ-প্রতিবাদে তাঁদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী কাণ্ড ঘটবার উপক্রম হল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উভয়কে শান্ত করলেন এবং তাদিগকে ধৈর্য ধারণ করতে আদেশ দিয়ে তিনি তখনই হযরত আবুবকরের ঘরে গেলেন।

হযরত আয়েশাকে তিনি রােগ শয্যায় শায়িত পেলেন। তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা অতিশয় করুণ। তাঁর পিতামাতা পার্শ্বে বসিয়ে তার সেবা-শুশ্রুষায় রত। জীর্ণ ও ক্লিষ্ট চেহারায় তার প্রতি তাকালে প্রাণে দয়ার সঞ্চার হয়। চক্ষু যুগল অশ্রুতে পূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর পাশ্বে বসলেন। তিনি আয়েমাকে বললেন- আয়েশা! যদি তুমি অন্যায় করে থাক, তবে আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থী হও। আল্লাহ পাক।

তােমার তওবা কবুল করবেন। আর যদি শত্রুরা শত্রুতার বশবর্তী হয়ে তােমার বিরুদ্ধে এই জঘন্য অপবাদ রটিয়ে তাকে তবে স্মরণ রাখবে, শীঘ্রই আল্লাহ তােমার পবিত্রতা ও নির্দোষিতার ব্যাপারে ওহী অবতীর্ণ করে শত্রুদেরকে মিথ্যা। অপপ্রচারকারী বলে চিহ্নিত করবেন।

নবী করীম (সাঃ)-এর এই কথার উত্তর দিবার জন্য তিনি স্বীয় মাতাপিতার। প্রতি ইঙ্গিত করলেন। কিন্তু তারা কি উত্তর দিবেন কোন কিছুই স্থাি করতে। পারলেন না। তাদের অপারগতা দেখিয়ে অতি ক্ষীণ কণ্ঠে হযরত আয়েশা (রাঃ)। বললেন- যদি আমি পবিত্র ও নির্দোষ বলে স্বীকার করি এবং আল্লাহ্ও এই বিষয়ে সাক্ষী- তবে এই জঘন্য অপবাদের ব্যাপারে কারও মনে সন্দেহ থাকবে। কি? আর আমার এই অস্বীকৃতি গ্রহণযােগ্য হবে কি না? তিনি আরও বললেনআমার অবস্থাএখন (হযরত ইয়াকুব (আঃ)-এর নাম ভুলয়ে গিয়েছিলেন) তাঁরই ন্যায়। যিনি বলেছিলেন-- ধৈর্যাবলম্বনই উত্তম পন্থা। অতএব আমি ধৈর্যই ধারণ করব।

হযরত আয়েশার উত্তর শুনে নবী করীম (সাঃ) সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। তিনিও আল্লাহর পক্ষ হতে ওহীর মাধ্যমে এর একটা মীমাংসা হয়ে যাক এটাই কামনা করতেছিলেন। কারণ হিংসুকদের অপপ্রচারের কোন প্রমাণ নেই। চারপ। প্রয়ােগে তা বন্ধ করা একান্ত প্রয়ােজন। অথচ পারিবারিক বিষয় বিধায় নবী করীম (সাঃ) বসিয়ে রইলেন। আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় নবীর মনােবেদনা দূর করতে এবং নারীকূল শিরমণি আয়েশার পবিত্রতার কথা ওহীর মাধ্যমে প্রকাশ করতে মনস্থ করলেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মধ্যে ওহী অবতীর্ণ হওয়ার লক্ষণ

দেখা দিল। কিছুক্ষণ পর তিনি স্মিতহাস্যে মাথা উত্তোলন করলেন। তাঁর ললাটে মুক্তার ন্যায় ঘর্মবিন্দু ঝলমল করতেছে। হযরত জিব্রাইল (আঃ) ওহী নিয়ে আসলেন। নবী করীম (সাঃ)-এর অন্তরের পুঞ্জীভূত বেদনা দূর হয়ে গেল। তিনি দ্রুত মসজিদে নববীতে পৌছেন, সেইখানে সমবেদ সাহাবাগণের নিকট তিনি আল্লাহর ওহী শুনালেন।

“আর যারা মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে তারা তােমাদেরই একটি দল। এই অপবাদকে তােমার তােমাদের জন্য অমঙ্গল মনে করিও না; বরং ইহা তােমাদের জন্য কল্যাণকর। তােমাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে তাঁদের কৃত পাপ কর্মের ফল এবং তাদের মধ্যে যে এই কাজে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে তার জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।

এই কথা শুনবার পর বিশ্বাসী পুরুষ এবং নারীগণ কেন। নিজদিগের বিষয়ে সৎ ধারণা করে নাই এবং বলে নাই ইহা নির্জলা অপবাদ।। তারা কেন এই বিষয়ে চারিজন সাক্ষী উপস্থিত করে নাই? যেহেতু তারা সাক্ষী উপস্থিত করে নাই সেহেতু তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তােমারা যাতে মগ্ন ছিলে।

মগ ছিলে তজ্জন্য কঠিন শাস্তি তােমাদিগকে স্পর্শ করত। যখন তােমার মখে এটা ছড়াচ্ছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারণ করতেছিলে যার কোন
তােমাদের ছিল না এবং তােমরা একে তুচ্ছ গণ্য করতেছিলে। যদিও আলাহর দৃষ্টিতে এটা ছিল গুরুতর এবং তােমরা যখন ইহা শ্রবণ করলে তখন। কেন বললে না, এ বিষয়ে বলাবলি করা তােমাদের উচিত নহে; আল্লাহ্ পবিত্র।

মহান ইহা এক জঘন্য অপবাদ। আল্লাহ তােমাদিগকে উপদেশ দিতেছেন, তােমরা যদি বিশ্বাসী হও তবে কখনও এরূপ আচরণের পুনরাবৃত্তি করিও না। আল্লাহ তােমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন এবং আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। যারা বিশ্বাসীদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাঁদের। জন্য রয়েছে ইহলােক ও পরলােক কষ্টদায়ক শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তােমরা জান না।” - হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উপর যখন হযরত আয়েশার পবিত্রতার বিষয়।

ঘােষণা করে আল্লাহ পাক সূরা নূরের ষষ্ঠ হতে উনিশতম আয়াত পর্যন্ত অবতীর্ণ করলেন, এতে সাহাবাগণ খুশিতে উৎফুল্লা হয়ে উঠলেন। এদিকে হযরত। আয়েশা (রাঃ) যেন কোন যাদুর স্পর্শে পলকেই সুস্থ হয়ে উঠলেন। তার করুণ। অবস্থা বিলুপ্ত হয়ে গেল। তেজস্বিনী ও অতুলনীয় মেধার অধিকারিণী হযরত আয়েশা তাঁর পূর্ব গৌরব ফিরিয়ে পেলেন। আল্লাহ পাক কোরআন শরীফের আয়াত অবতীর্ণ করায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বললেন, “আয়েশা! বাস্তবিকই তুমি সিদ্দীক তয়া সিদ্দীক তনয়া সিদ্দীকা ।

হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর জননী তাকে বললেন, “মা, আল্লাহর ইচ্ছায় । তােমার সচ্চরিত্রতার কথা তিনি স্বয়ং ওহীর মারফরত প্রচার করেছেন। তুমি স্বামীর পদধলা নিয়ে আল্লাহরই শুকরিয়া আদায় কর।” মায়ের এই খথা শুনে। চির অভিমানী হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেন, “আমি কেবল মাত্র আল্লাহরই। শােকর-গােজারী করতেছি। তিনি আমার সতীত্বের সত্যসাক্ষ্য দান করিয়াছেন। আমি আর কারও নিকট কৃতজ্ঞ নহি।”

কুৎসা রটনাকারীদের শাস্তির বিষয়ও আল্লাহতায়ালা অপর আয়াতে ঘােষণা। করলেন। এই নির্দেশ অবগত হয়ে সাহাবাগণ খুব আনন্দিত হলেন। কুৎসাকারীদেরকে উপস্থিত করা হল। তারা যে অপবাদ প্রচার করিয়েছে এর । সত্যতার জন্য তাদিগকে সাক্ষী উপস্থিত করতে বলা হল। তারা কোন সাক্ষী।

উপস্তিত করতে পারল না। তারা নিজেরাই অপরাধ স্বীকার করল। তারা তা বলল, আমরা কেবল একটি শুনা কথা প্রচার করেছি।।
তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সূরা নূরে বর্ণিত অপবাদকারীদের যে শাস্তির বিধ। অবতীর্ণ হয়েছিল সেই অনুযায়ী আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ব্যতীত অপর তিনজন আশি দোররা মারা হল। আর আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের ভার আল্লাহর উপর। ছেড়ে দিলেন।


আমাদের কিছু কথা

বাংলায় লিখতে গিয়ে যদি কোনো ধরনের ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

এবং যদি আপনাদের কোন ধরনের সাজেশন থাকে তাহলে অবশ্য আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন

আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ

আমাদের এই পোস্টে ভিজিট করার জন্য

এবং যদি ভালো লাগে এই পোস্টটি তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

Post a Comment

0 Comments