হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী - হিযরত Part 8

 হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী বই

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী

হিযরত

বিবাহের পর হযরত আয়েশা (রাঃ) হিজরতের পূর্ব পর্যন্ত তিন বছর পাঁচ মাস পিত্রালয়ে অবস্থান করেন। এই সময়ে মক্কা শরীফে মুসলমারনর সংখ্যা ছিল অতি নগণ্য। এই অল্প সংখ্যক নও মুলমানের উপর কাফেররা প্রতিনিয়ত।

অমানুষিক অত্যাচার করিত।

তহাদের অত্যাচারের প্রতিবাদ করিবার ক্ষমতাও মুসলমানদের ছিল না। তাই নীরবেআহাদের অত্যাচার মুসলমানদিগকে সহ্য করিতে হত।

হযরত আবুবকর (রাঃ) ছিলেন হযরত রাসূলে করীম (সাঃ)-এর একান্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই তাহার উপর কাফেরদের অত্যাচার এবং নির্যাতন ছিল অন্যান্যদের ছেয়ে বেশী। পিতার উপর কাফেরদের এহেন জুলুম ও অত্যাচার দেখিয়া হযরত আয়েশার কোমল প্রাণে দুঃখের ছায়া নামে আসে। ছােটবেলা হতে বিবি আয়েশা ছিলেন পিতার প্রতি বিশেষ অনুরক্তা।

পিতার এই দুঃখ তাঁহার আর সহ্য হল না। তাই তিনি পিতার নিকট আরজ কররেনঃ মক্কায়। অবস্থান করে যখন শান্তিতে বসবাস এবং আল্লাহর ইবাদত করবার উপায় নাই, তখন এখন হতে হিজরত করে অন্য কোথাও আশ্রয় নিয়ে শান্তির সাথে আল্লাহর হুকুম পালন করাই আমি যুক্তিযুক্ত মনে করি।'

ছােট মেয়ের মুখে এই আব্দার ও যুক্তিপূর্ণ কথা শুনে হযরত আবুবকর বললেন, মা, রাসূলুল্লাহর (সাঃ) আদেশ না পেলে আমাদের কোথাও যাবার সাধ্য নাই। ইতােমধ্যেই নবী করীম (সাঃ) কতিপয় সাহাবীকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করবার জন্য নির্দেশ দিলেন। এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে হযরত আবুবকরও (রাঃ) আপন পরিবার-পরিজন নিয়ে আবিসিনিয়ায় রওয়ানা হলেন।

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন-“আমার পিতা মক্কা হতে হিজরত করে। আবিসিনিয়ার পথে কিছুদূর অগ্রসর হলে পথিমধ্যেই ইবনে দাগান্না নামক জনৈক ব্যক্তির সাথে বরকুন নাআদ’ নামক স্থানে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। ইবনে দাগান্না আমার পিতাকে হিজরত করতে দেখে বললেন, ‘মক্কার কোরাইশদের মতিশ্রভ হয়েছে।

তা না হলে আবুবকরের ন্যায় ব্যক্তিকেও কেন হিজরত করতে হবে? তিনি কাফেরদের এরূপ হীনকার্যের জন্য বিশেষভাবে মর্মাহত হলেন এবং অনেক অনুনয়-বিনয় করে আমার পিতাকে আবিসিনিয়ার পথ হতে ফিরায়ে আনলেন।

হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর আদেশের অনুকূলে যদিও হযরত আবুবকর (রাঃ) আবিসিনিয়ায় হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন সত্য, কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কথা সকল সময় তাকে পীড়া দিতেছিল। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চরম বিপদ ও নির্যাতনের মুখে রেখেই তাঁকে আবিসিনিয়া গমন করতে হয়েছিল। আবিসিনিয়ার পথে গমন করতে থাকলেও আবুবকরের (রাঃ) অন্তর।

ছিল মক্কায়। তাই ইবেন দাগান্নার আশ্বাস ও অনুরােধে হযরত আবুবকর (রাঃ) আবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট এসে অতিশয় আনন্দিত হলেন।

কীফেরদের।

প্রতাপশালী ধনবান ইবেন দাগান্নার কারণে যদিও হযরত আবুবকরের উপর।
দর অত্যচার কিছুটা শিথিল হয়েছিল, কিন্তু অন্যান্য মুসলমান এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর উপর তাদের অত্যাচার বহুগুণে বেড়ে গেল। তাদের। অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনায় হিজরত করবার কথা। মনে মনে ভাবতেছিলেন। ইত্যবসরে নবুওয়ের ত্রয়ােদশ বর্ষের সফর মাসের অষ্টাদশ তারিখে আল্লাহর পক্ষ হতে মদীনায় হিজরত করবার জন্য রাসূলে করীম (সাঃ) অহীপ্রাপ্ত হন।
 

অহী লাভ করবার সাথে সাথেই রাসূলে করীম (সাঃ) হযরত আবুবকরের (রাঃ) গৃহাভিমুখে রওয়ানা হলেন। হযরত নবী করীম (সাঃ) প্রতিদিনই সকাল-সন্ধ্যায় হযরত আবুবকর (রাঃ) এর ঘরে যাতায়াত করতেন। এটা ছিল তাঁর নিত্য দিনের নিয়ম। আজ তিনি হযরত আবুবকরের (রাঃ)-এর ঘরের দরজায় পৌছিয়েই তাঁকে ডেকে বললেন, “আবুবকর, তােমার সাথে আমার গােপনীয় আলাপ রয়েছে। তাই তােমার নিকট যারা রয়েছে তাদিগকে সরিয়ে যাবার জন্য নির্দেশ প্রদান কর।

প্রতুত্তরে হযরত আবুবকর আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আসতে পারেন। এখানে আপনার আপন লােক ব্যতীত আর কেহ নাই।' নবী করীম (সাঃ) ঘরে প্রবেশ দেখলেন- আবুবকর (রাঃ) তার কন্যা হযরত আয়েশা। এবং আসমার সাথে কথা বলতেছেন। হযরত আবুবরক আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ)! কি এমন জরুরী ও গােপনীয় আলাপ মেহেরবানী করে প্রকাশ। করুন। নবী করীম (সাঃ) তখন তাঁর নিকট হিজরতের ব্যাপারে আল্লাহর ঐশীবাণী সবিস্তার প্রকাশ করলেন।

এ সংবাদ জানতে পেরে হযরত আয়েশা এবং আসমা হিজরতের জন্য প্রয়ােজনীয় আসবাবপত্র সুনিপুণভাবে সাজাতে আরম্ভ করলেন। যাত্রার প্রাক্কালে হযরত আয়েশা (রাঃ) তাঁদের সাথে হিজরত করবার জন্য জিদ ধরলেন। হযরত আবুবকর (রাঃ) অনেক বুঝিয়ে এবং মদীনায় পৌছিয়ে যথাশীঘ্রই তাদিগকে মদীনা নেয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দিলেন। পিতার এই আশ্বাসবাণীতে হযরত আয়েশা আশ্বস্ত হলেন এবং আপন মনােভাব পরিবর্তন করলেন। সমস্ত

পরিবার-পরিজনকে আল্লাহ্র ও রাসূরের শত্রুদের মধ্যে রেখে অতিগােপনে আল্লাহর অতি প্রিয় দুজন বান্দা ঐশীবাণী প্রাপ্তির বার দিন পর মদীনার পথে রাত্রের অন্ধকারে পা বাড়ালেন।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনায় হিজরত করে চলে যাচ্ছেন এই গােপন সংবাদের আভাস পেয়ে তাঁকে আবাসগৃহে আটক করবার জন্য শত্র চতুর্দিকে রাতের বেলায় লােক নিয়ে করেছিল। কিন্তু খােদার অশেষ মেহেরবানীতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)। তাদের চোখে ধূলা দিয়ে ঘর হতে বের হয়ে পড়লেন।

সােবহে সাদিকের সময় যখন কাফেরগণ দেখল যে, তাদের শিকার হাত ছাড়া হয়ে গিয়েছে, তখন তাকে খুঁজে বের করবার জন্য চারদিকে তাদের চর প্রেরণ করল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং হযরত আবুবকর (রাঃ) তিনদিন তিনরাত মক্কার অনতিদূরে আতহাল পর্বতের ছাওর গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। পূর্ব নির্ধারিত ব্যবস্থা অনুযায়ী বিশেষ সহচর তথায় উট নিয়ে উপস্থিত হলে তাঁরা। উভয়ে উক্ত উটে আরােহণ করে মদীনার পথে চললেন।


ছােট বালিকা হযরত আয়েশা ৮ বছর বয়সেই হিজরতের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন। তাই এই গােপন সংবাদ কাকেও জানতে দিলেন না। হযরত আবুবরক (রাঃ)-এর পিতা আবু কোহাফা হিজরতের সংবাদ জ্ঞাত হয়ে প্রথমে পরিবারের দেখাশােনা ও ভরণ-পােষণের জন্য কিছুটা চিন্তিত হলেন। কারণ তিনি ছিলেন ঐ সময়ে অন্ধ। তাই তিনি হযরত আয়েশাকে ডেকে জানালেন, তােমার পিতা কোন ধন-সম্পদ রেখে গিয়েছেন কিনা? মূলতঃ হযরত আবুবকরের ঘরে রেখে যাবার মত কোন ধন-সম্পদই ছিল না।

 হযরত আয়েশা বিব্রত বােধ করলেন। কারণ আবু কোহাফা ধার কর্জ চাইতে গিয়ে হিজরতের গােপন রহস্য কথা প্রসঙ্গে কারও নিকট বলে দেন এই ছিল তাঁর ভয়। তাই এক চাতুরীর মাধ্যমে তিনি দাদাকে জানিয়ে দিলেন, পিতা বেশ ধন-সম্পদ রেখে গিয়েছেন।
মদীনাবাসীরা জানতে পারলেন-দ্বীনের নবী মক্কায় কাফেরদের অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে নিরুপায় হয়ে মদীনায় হিজরত করতে আসতেছেন। এই সংবাদ পৌছার সাথে সাথে মদীনায় খুশীর তুফান বয়ে গেল।

আকাবার প্রতিজ্ঞার পর হতে মদনািবাসী আকার-ইঙ্গিতে রাসূলুল্লাহ মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় আসুক তাই বুঝতেছিলেন। বিলম্ব হলেও তাদের প্রিয় নবী তাদের কাছে আসতেছেন জানতে পেরে নবীর আগমণ পথের দিকে চেয়ে রইল। তাঁকে বিশেষ মর্যাদার

সাথে বরণ করেত মহল্লায় মহল্লায় সাড়া পড়ে গেল। নানা বাধা-বিপত্ত অতিক্রম করে ৬২২ খৃষ্টাব্দের ২০ শে সেপ্টেম্বর মােতাবেক রবিউল আউয়াল মাসের আট তারিখে মদীনার উপকণ্ঠে উপনীত হন এবং ১২ তারিখে মদীনায় প্রবেশ করেন।
মদীনায় প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সেখানে মাতুল বংশীয় হযরত আবু আইয়ুব আনসারীর গৃহে এবং হযরত আবুবকর (রাঃ) খারেজা ইবনে জায়েদা আনসারীর গৃহে মেহমানরূপে অবস্থান করেন। রাসূলে করীম (সাঃ) হযরত আবু আইয়ুব আনসারীর গৃহে সাত মাস অতিবাহিত করেন।

ইতােমধ্যে মসজিদে নববী এবং এর চারিপার্শ্বস্থ গৃহসমতু নির্মিত হয়। হযরত আবুবকর (রাঃ) আপন বাসগৃহ সুনাহ নামক পল্লীতে তৈরি করলেন। তাঁদের বাসগৃহ নির্মিত হবার পর আপন পরিবার-পরিজনকে মক্কা হতে মদীনায় আনবার ব্যবস্থা করলেন। এই উদ্দেশ্যে তাঁরা আবু রাফে, আবদুল্লাহ। ইবনে আবুবকর এবং জায়েদকে মক্কায় প্রেরণ করলেন।

তারা যথা সময় মক্কায় উপস্থিত হয়ে উম্মুল মু'মিনীন সাওদাহ, নবী দুহিতা উম্মে কুলসুম ও ফাতেমা এবং আবুবকরের স্ত্রী হযরত উম্মে রুমান, কন্যা হযরত আসমা ও হযরত আয়েশাকে নিয়ে আবার মদীনার দিকে রওয়ানা হলেন। আবদুল্লাহ ইবনে আবুবকর মা ও বােনদ্বয়কে নিয়ে রওয়ানা হলে পথিমধ্যে এক বিপদের সম্মুখীন হলেন। হযরত আয়েশা যে উটে আরােহণ করেছিলেন উহা হঠাৎ রেগে পাগলের ন্যায় দৌড়াতে।

আরম্ভ করে। উহার দৌড়ের দরুন যে কোন সময় হযরত আয়েশা (রাঃ) হাওদাসহ মাটিতে পড়েত পারেন। মা কন্যার এহেন বিপদ দেখিয়ে মহাচিন্তান্বিত হয়ে পড়লেন। অনেক পথ অতিক্রম করবার পর এই পলায়নপর উটকে আটক করার পর মায়ের প্রাণে নব প্রাণের সঞ্চার হল।

তাঁরা মদীয়নায় পৌছিলে হযরত আয়েশা পিত্রালয়ে রইলেন। কারণ তখনও রুছমত সম্পন্ন হয় নাই। নবী করীম (সাঃ) কন্যা ফাতেমা ও উম্মে কুলসুম এবং স্ত্রী সাওদাকে নিয়ে মসজিদে নববীর পার্শ্বে নির্মিত গৃহে বসবাস করতে থাকেন।
মদীনার আবহাওয়া নবাগতদের জন্য অনুকূল ছিল না। হযরত আবুবকর । (রাঃ)-এর পরিবারের সকলেই রােগাক্রান্ত হলেন। প্রথম দিকে হযরত আয়েশা সুস্থ ছিলেন। রােগীদের সেবা তিনিই করতেন। অবশেষে হযরত আয়েশা এমন ভীষণ রােগে আক্রান্ত হলেন, অনেকে তাঁর জীবনের আশা ছেয়ে দিল।

জ্বরের দারুন তার দীর্ঘ কেশরাজি ঝরে গেল। আরােগ্যের পর তিনি ন্যাড়া মস্তক পিতাকে দেখিয়ে আক্ষেপ করতেন। তাঁর পূর্ণ স্বাস্থ্য লাভ করতে সাত মাস। লেগেছিল। পতিগৃহে গমন। 

হিজরতের পর হযরত আয়েশা যখন সম্পূর্ণরূপে রােগমুক্ত হয়ে উঠলেন, আবুবকর (রাঃ) স্বীয় স্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী দ্বিতীয় হিজরী সনের ১০ই শাওয়াল কন্যা আয়েশার রুছমতের ব্যবস্থার বিষয়ে ভাবতে লাগলেন। তাই তিনি এই কথা হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট উত্থাপন করে তার মতামত প্রার্থনা করলেন।

হযরত রাসূলে করীম (সাঃ)-এর যদিও এই ব্যাপারে অমত থাকবার কথা নহে, কিন্তু অর্থাভাবে তিনি এই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে হযরত আবুবকরকে জানালেন, আমি এই সময় সম্পূর্ণ কপর্দক শূন্য। মােহরের পাঁচশত দেরহাম ও আনুষঙ্গিক খরচেরও কোন উপায় দেখতেছি না। অতএব, তাড়াতাড়ি রুছমত সম্পন্ন করা আমার সাধ্যের বাইরে। টাকা-পয়সার ব্যবস্থা হলেই রুছমত অনুষ্ঠান সমাধা করব।


রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কথা শুনে আবু বকর আরজ করলেন-“আপনি প্রয়ােজনী অর্থ আমার নিকট হতে ধার নিন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর এই। প্রস্তাবে সম্মত হলেন না।

কারণ, তিনি ভাবলেন- যদিও এই সময় আবুবকর অর্থ। ধার দেয় কিন্তু পরে তা গ্রহণ না করলে কিছুই করবার থাকবে না। তাই তিনি। মনস্থ করলেন যে, অপরের নিকট হতে ধার করবেন অথবা কায়িক পরিশ্রম করে। প্রয়ােজনীয় অর্থ সংগ্রহের পর রুছমতের কাজ সমাধা করবেন-তবেই আয়েশাকে গৃহে আনবেন।

হযরত আবুবকর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মনােভাব বুঝে পুনরায় আরজ কররেন- ‘আপনি আমার নিকট হতে অর্থ ধার নিন। সুযােগ মত আপনি পরিশােধ করে দিবেন। আমি তখন উহা ফেরত নিব। রাসূলুল্লাহ আবুবকরের এই আশ্বাস পেয়ে কর্জ করেত সম্মত হলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আবুবকরের নিকট হতে বার উকিয়া (বাংলাদেশী একশত টাকা) ধার নিয়ে মােহর হিসাবে আয়েমার নিকট পাঠিয়ে দিলেন। আর রুছমতের দিন দ্বিতীয় হিজরীর একুশে শাওয়াল ধার্য । হল।।

মদীনায় উল্লাসের সাড়া পড়ে গেল। আনসার ও মুহাজির রমণীগn আয়েশাকে নববধূরূপে নিয়ে যাবার জন্য হযরত আবুবকর (রাঃ)-এর গত আগমন করলেন। বরযাত্রীর আগমেন হযরত আবুবকর মহা আনন্দিত হলেন. অভ্যর্থনার মাধ্যমে মেহমানকে বরণ করে তাদের আদর আপ্যায়নের ভিতর দিয়ে ভােজপর্ব সমাধা করলেন। | এদিকে আয়েমা (রাঃ) দোরনায় দোল খাচ্ছিলেন। মায়ের ইঙ্গিতে দৌড়াইয়া। তাঁর নিকট উপস্থিত হন। মা তাঁকে গােসল করিয়ে আগত মহিলাদের নিকট আনলে তারা বলে উঠলেন

আপনার আগমন মঙ্গলময় ও শুভ হউক।

তারা আয়েশাকে সাজাতে শুরু করলেন। সাজাবার কাজ সমাধা হলে হযরত আবুবকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহকে অন্তঃপুরে আনলেন। তাঁর আগমনে সকলেই শুভাগমন বলে তাকে অভ্যর্থনা জানালেন। আবুবকর (রাঃ)-এর ইঙ্গিতে। আয়েশার সখী আসমা তাকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পার্শ্বে বসিয়ে দিলেন। মা উম্মে রুমান কন্যার একহাত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাতে তুলে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

এই সময় আবুবকর (রাঃ) এক পেয়ালা দুধ মেহমানদের সম্মুখে উপস্থিত করলেন। এই মজলিসে আয়েশার সই আসমা বিনতে ইয়াযীদ উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পেয়ালা হতে কিছুটা দুধ পান করে আয়েশার হাতে দিলেন।

আয়েশা (রাঃ) লজ্জাজনিক কারণে মাথা নত করে বসে রইলেন। আমি তখন বললাম, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পদত্ত বস্তু ফিরাতে নাই। অতঃপর আয়েশা পেয়ালা হতে কিছু দুধ পান করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ তাঁকে বললেন, তােমার সখীদিগকে দাও। আমি বললাম, “ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! আমাদের ক্ষুধা নাই। হযরত বললেন, মিথ্যা বলিও না। কারণ মানবের প্রত্যেক কথাই আমলনামায় লিখা হয়।

=ভর (সাঃ)-এর দ্বিতীয় স্ত্রী উম্মুল মু'মিনীন সাওদা পতিগৃহে হযরত আয়েশা নববধূবেশ বরণ করলেন। মা উম্মে রুমান আয়েশার সখী আসমাকে তার সাথে পাঠিয়েছিলেন। আল্লাহর প্রিয় রাসূলের এমন দিনে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে
নিয়ে উৎসব করবার মত কোন ব্যবস্থাই তার ঘরে ছিল না। অথচ আজ তাঁর জীবনের এক পরম খুশীর দিন। কিছু নাই বিধায় তার মত

সে বিবাহ-শাদী হওয়াকে অবসান ঘটে। যাহার ফলে তিনি শাওয়াল মাসে বিবাহ-শাদী = বিশেষভাবে পছন্দ করতেন। হযরত আয়েশা হতে হাদীস বর্ণিত হয়েছে ৫ বলেন, আমার বিবাহ ও পতিগৃহে গমন শাওয়াল মাসে হয়েছে, আমা আর সৌভাগ্যশালিনী কে আছে?

আরবের আরও একটি প্রথা ছিল, নববধূ পিতৃগৃহে যাবার সময় সম্মুখ ভাগে একব্যক্তি আগুন নিয়ে পথ চলত। আরােহীতে বসে বর-কনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকত। আয়েশা (রাঃ)-এর বিবাহের পর এই প্রথা চিরতরে বিলােপ হল।

সকলের অবগতির জন্য এই স্থানে একটি বিষয় আলােচনা করা আমরা একান্ত প্রয়ােজনীয় বলে মনে করি। আপনারা উপরে পাঠ করেছেন যে, হযরত আয়েশা দেনমােহর ধার্য হয়েছেল মাত্র পাঁচশত দেরহাম অর্থাৎ একশত টাকা আর দেন-মােহর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রুছমতের পূর্বেই হযরত আয়েশাকে পরিশােধ করে দেন।

যে পরিমাণ মােহর আদায় করা মজজ সেই পরিমাণ ধার্য করাই বাঞ্ছনীয় । অধুনা সমাজে অধিক মােহর ধায় করবার একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছে। কে কার অপেক্ষা বেশি মােহর ধার্য করতে পারে ইহা যেন একটা মহা প্রতিযােগিতা। অথচ স্ত্রীর হক পরিশােধ করবার প্রতি কারও খেয়াল মাত্র নাই। তাই সকলেরই রাসূলের পথ অনুসরণ করে প্রকৃত শিক্ষা লাভ করে এর সমাধানকল্পে বাস্তমুখিতায় ধাবিত হওয়া কর্তব্য 


আমাদের কিছু কথা

বাংলায় লিখতে গিয়ে যদি কোনো ধরনের ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

এবং যদি আপনাদের কোন ধরনের সাজেশন থাকে তাহলে অবশ্য আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন

আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ

আমাদের এই পোস্টে ভিজিট করার জন্য

এবং যদি ভালো লাগে এই পোস্টটি তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

Post a Comment

0 Comments