হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী Part 14 - Islamic Life History

 হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী বই

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী, Islamic Life History

হযরত উম্মে যয়নব বিনতে জহশ (রাঃ)

 হুযুর (সাঃ)-এর পালিত পুত্র হযরত যায়েত ইবনে সাবেতের সাথে হযর যয়নব রিতে জহশের প্রথম বিবাহ হয়েছিল। এক সময় যায়েদ ছিলেন ক্রীতদাস। আর হযরত যয়নব হচ্ছেন নবী করীম (সাঃ)-এর ফুফাত বােন। তিনি আভিজাত্য ও বংশ মর্যাদার কথা ভেবে বিব্রত হতেন। স্বামীর সাহিত মেন মনকোলা আলাপ করতে পারতেন না। তাঁর এই অবস্তা উপলব্ধি করে যায়েদ তাকে তালাক দিবার জন্য হযরতের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেন।
 
 কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রতিবারই যায়েদকে ধৈর্যধারণ করতে উপদেশ দিয়ে বিদায় দিতেন। পরবর্তী পর্যায়ে তাদের মনােমালিন্য আরাে বৃদ্ধি পেলে তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। | বিচ্ছেদের পর ৫ ম হিজরীতে আল্লাহর ইঙ্গিতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে। বিবাহ করেন। এই বিবাহকে উপলক্ষ করে পবিত্র কোরআনে কয়েকটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত যয়নব (রাঃ) ছিলেন একাধারে রূপসী, ধর্মভীরু, সত্যবাদিনী, দানশালা, স্বজনদের প্রতি স্নেহবতী ও হিতাকাঙ্ক্ষীনী।
 
 তিনি নবী করীম (সাঃ)-এর নিকটতম আত্মীয়া ছিলেন বলে নিজেকে সর্বাপেক্ষা মর্যাদা ও সম্মানের পাত্রী বলে ভাবতেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, যে, হযরত জনয়নব। ইতে অধিকতর ধর্মভীরু কোন নারী হতে পারে না। আল্লাহ তার উপর রহম। করুন। তিনি আরাে বলেন যে, নারী পত্নীগণের মধ্যে কেবলমাত্র যয়নবই আমার সমমর্যাদার দাবী করতেন।

 হযরত আয়েশা (রাঃ) ও হযরত যয়নব (রাঃ)

 নানা গুণ-গরিমায় সমকক্ষ ছিলেন বলে অনেকেরই ধারণা ছিল, তদের মধ্যে হয়ত প্রতিযােগিতা ও বিদ্বেষ চলতেছে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোন বিষয়ে আলাপ-আরােচনার ভিতরে একটু দ্বিমত দেখা দিলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকত। কোন এক রাথে যয়নব আয়েশার ঘরে আগমন করেন। ঘরে কোন বাতি ছিল না। নবী করীম (সাঃ) অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করে যেইদিকে যেতেছিলেন সেখানে যয়নব রয়েছেন বলে হযরত আয়েশা জ্ঞান করালেন।
 
 এই কথার প্রেক্ষিতে হযরত যয়নব কি যেন বললেন। এবার হযরত আয়েশা (রাঃ)-ও তাঁর। কথার প্রতিবাদ করলেন। তাঁদের মধ্যে বাদানুবাদ শুনে হযরত আয়েশা জ্ঞাত করালেন। এ কথার প্রেক্ষিতে হযরত যয়নব কি যেন বললেন। এবার হযরত আয়েশা (রাঃ)-ও তাঁর কথার প্রতিবাদ করলেন। তাঁদের মধ্যে বাদানুবাদ শুনে। হযরত আবুবকর মসজিদ হতে বের হয়ে আসলেন। তিনি নবী করীম (সাঃ)-কে ঘর হতে বের হয়ে আসতে অনুরােধ করলেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) বুঝতে পারলেন তাঁর পিতা খুব রাগান্বিত হয়েছেন।
 
 তিনি একেবারে চুপ হয়ে গেলেন। কিন্তু হযরত আবুবকর (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করে মেয়েকে ভৎসনা করলেন। - মদীনায় মুনাফিকগণ হযরত আয়েশার উপর জঘন্য অপবাদ দিলে যয়নবের ভগ্নি হামনাও তাদের সাথে এই অপবাদে যােগ দেয়। ভগ্নির এই ব্যবহারে তিনি আয়েশা (রাঃ)-কে বললেন-“আজ হতে আপনি আমার বােন, সে আমার বােন নহে। নবী করীম (সাঃ) আয়েশার চরিত্রের কথা তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি নির্দ্বিধায় বলে দিলেন। আমি তাঁর সম্বন্ধে ভাল ব্যতীত মন্দ কিছুই জানি না।
 
একবার হযরত যয়নব উম্মুল মু'মিনীন হযরত সুফিয়াকে কথা প্রসঙ্গে ইয়াহুদী কন্যা বলে ভৎসনা করেছিলেন। তাঁর এই ব্যবহারে নবী করীম (সাঃ)। দুই মাস যাবৎ তার সহিত কথােপকথন বন্ধ করে দেন। রাসূলুল্লাহর এই ক্রোধ। প্রশমিত করবার জন্য নিরুপায় হয়ে তিনি অবশেষে হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর শরণাপন্ন হন। হযরত আয়েশা অতিশয় বিচক্ষণতার সাথে আলাপের মাধ্যমে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ক্রোধ দমন করে দেন এবং হযরত যয়নবকে ক্ষমা করেন।

উপরের ঘটনাবলি থেকে দেখা যায়, যদি তাদের মধ্যে বিদ্বেষ বা প্রতিহিংসা থাকত তবে তারা উভয়েই রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট সপত্নীর কুৎসা ও বিরােধী প্রচারণা চালিয়ে একে অপরকে জব্দ করতে পারতেন। কিন্তু তারা। ছিলেন মানবীয় এই সমস্ত দোষ ও স্বার্থপতার অনেক ঊর্ধ্বে। তাই সামান্য কথা। কাটাকাটি হলেই তারা সাথে সাথেই তা ভুলে যেতেন।

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি যয়নব অপেক্সা অধিক দান-খয়রাত হতে দেখি নাই। তিনি স্বহস্তে যা উপার্জন করতেন তাহা গরীব, মিসকীনদের। মধ্যে বিতরণ করে দিতেন, তাঁর এই দান-খয়রাতের প্রতি ইঙ্গিত করে একবার নবী করীম (সাঃ) সমবেত মহিষীগণের মধ্যে ইরশাদ করলেন-তােমাদের মধ্যে। যার হাত লম্বা, আমার মৃত্যুর পর সে-ই আমার সহিত প্রথমে মিলিত হবে।

হযরত উম্মে হাবীবাহ আবু সুফিয়ান (রাঃ)। হযরত উম্মে হাবীবা প্রসদ্ধি কোরাইশ দলপতি আবু সুফিয়ানের কন্যা ও হযরত আমীর মাবিয়ার ভগ্নি। তাঁর প্রথম স্বামী ইন্তেকাল করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে আশ্রয় দিবার জন্য আপন তত্ত্বাবধানে আনয়ন করেন। পরে ৬ষ্ঠ। হিজরীতে তাঁকে বিবাহ করে আপন পত্নীত্বে স্থান দেন। স্বামী সংসারে তারা যদিতিন ছিলেন ততদিন তাদের মধ্যে কেন প্রকার মনােমালিন্য হয়েছে বলে।

কোন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তাঁদের মধ্যে উত্তম সম্পর্ক ছিল বলেই একটি ঘটনা দ্বারা প্রামণিত হচ্ছে। আছমাউলরিজাল’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে, যখন হযরত উম্মে হাবীবা মৃত্যুশয্যায় শায়িত তখন তিনি সর্বপ্রথম তাঁহার নিকট হযরত আয়েশাকে ডেকে পাঠান। হযরত আয়েশা (রাঃ) তাঁহার শয্যাপার্শ্বে উপস্থিত হলেন। তিনি তাকে লক্ষ্য করে বললেন, “বােন, সতীনদের মধ্যে মনােমালিন্য হওয়া স্বাভাবিক।

আমাদের যদি কখনও এমন কিছু হয়ে থাকে তবে আমাকে ক্ষমা করিবেন। তার আবেগময় কথার উওরে হযরত আয়েশা বললেন, আমাদের জ্ঞাতসারে কোন মনােমালিন্য হয়েছে বলে আমার খেয়ালে আসে না। অজ্ঞাতে কোন কিছু হয়ে থাকলে আল্লাহপাক আমাকে এবং আপনাকে মাফ করে দিক। তার এই জবাব শুনে হযরত উম্মে হাবীবা বললেন বােন! আপনি আমাকে খুশি করেছেন আমি নিশ্চিন্ত হলাম। আল্লাহর নিকট মুনাজাত করি তিনি আপনাদিগকে শান্তিতে রাখুন।

হযরত উম্মে সুফিয়া (রাঃ) সপ্তম হিজরীতে ইনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। । ছিলেন খায়বরের ইয়াহুদী রাজকন্যা। তিনি অতিশয় রূপসী ছিলেন। খাযবর ২তে আসবার সময় তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে একটি উটে আরােহণ করে।

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ)মদিনায় পৌছেন

এক আনসার মহিলার গৃহে তাকে উঠান হয়। তাঁর রূপে কথা শুনিয়ে মদীনার বহু রমণী তাঁকে দেখবার জন্য উক্ত মহিলার ঘরে যায়। হযরত আয়েশা (রাঃ)-ও বােরখা পরিয়া তাঁকে দেখতে যান। কিন্তু বােরখা পরিহিত অবস্থায় নবী করীম (সাঃ) হযরত আয়েশাকে চিনে ফেলেন। তিনি ধীরে ধীরে তাঁর নিকট গমন করে প্রশ্ন করেন, আয়েশা।

কেমন দেখলে? হযরত আয়েশা (রাঃ) একটু কটাক্ষ করে বললেন, রূপসী, কিন্তু সে তােম ইয়াহুদিনী । হুযুর (সাঃ) বললেন, ইহা বলা তােমার পক্ষে একান্ত গর্হিত হয়েছে। সে ইসলাম কবুল করেছে। * এই রাজ দুহিতা যেমন সুন্দরী, তেমনি বহু গুণের অধিকারিণীও ছিলেন। রন্ধন কাজে তিনি অতিশয় পারদর্শী ছিলেন। গােশত দ্বারা তিনি বিভিন্ন উপাদেয়। খাদ্য তৈরি করতে পারতেন। হযরত আয়েশা বলেন, আমি সুফিয়া (রাঃ) অপেক্ষা উত্তম রান্না করতে কাউকেও দেখি নাই।

হযরত আয়েশা তাকে খুব স্নেহ করতেন। অনেক সয় তিনি তাকে আপন ঘরে ডাকতেন। হযরত সুফিয়া। (রাঃ)-ও হযরত আয়েশাকে মনে প্রাণে ভালবাসতেন। তাঁর অমায়িক ব্যবহারে তাকে সকলেই শ্রদ্ধা করতেন। | একদা হযরত আয়েশা ও হযরত সুফিয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্য গােশত পাকাবার ব্যবস্তা করেন। সুফিয়ার রান্না হয়ে গেলে তিনি একটি পেয়ালায় করে। একজন পরিচারিকার দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খেদমতে প্রেরণ করেন। তখনও হযরত আয়েশার পাক হয় নাই।

সুফিয়ার ঘর হতে তাঁর পাক হবার পূর্বে রাসূলুল্লাহকে গােশত পাঠিয়ে দেয়ায় তিনি পরিচারিকার হাত হতে পেয়ালটি ফেলে দিলেন। ফলে পেয়ালাটি ভেঙ্গে গেল। এই ঘটনায় নবী করীম (সাঃ) রিচারিকাকে শুধু এই বললেন যে, তােমার আম্মা রাগ করেছেন। আর আপন মনে ভাঙ্গা পেয়ালার টুকরা সংগ্রহ করতে লেগে যান। ক্ষণকাল পরে আয়ে৷ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলে আপন কৃতকর্মের জন্য অত্যন্ত মর্মাহত হন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খেদমতে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ!

আমার এই কাজের কি প্রায়শ্চিত্ত হতে পারে? নবী করীম (সাঃ) ইরশাদ করলেন, এরূপ একটা পেয়ালা এবং উত্তমভাবে রন্ধনকৃত গােশত পাঠায়ে দিলেন। তার মধু আচরণে আত্মীয়-স্বজন তাকে অতিশয় শ্রদ্ধা করতেন। হযরত আয়েশা বলেন , আত্মীয়-স্বজনের প্রতি এরূপ উত্তম ব্যবহার করতে আমি অপর কাকেও দে নাই।

হযরত আয়েশার সহিত উক্ত রূঢ় ব্যবহার ছাড়া তাঁর আর কোন

মনােমালিন্য হয় নাই। হযরত উম্মে মাইমুনা (রাঃ) হযরত মাইমুনার (রাঃ) হিজরী ৭ম সনে রাসূলুল্লাহর সাথে বিবাহ হয়। তার সহিত আয়েশার সম্পর্ক কেমন ছিল তার বিবরণ কোথাও পাওয়া যায় না। কিতাবুর রিজালে উল্লেখ আছে, উম্মুল মু'মিনীন হযরত মাইমুনা ইন্তেকাল করলে আয়েশা (রাঃ) বলেছিলেন, তিনি আমাদের মধ্যে অধিক ধর্মপরায়ণা ছিলেন।

হযরত উম্মে মারিয়ায়ে কিবতিয়াহ (রাঃ)। আফ্রিকার সম্রাট মিকাউসের অনুরােধক্রমে হুযুর (সাঃ) ৭ম সনে হযরত মারিয়ায়ে কিবতিয়া (রাঃ) কে বিবাহ করেন। তিনি সম্রাট মিকাউসের চাচাতাে বােন। হযরত আয়েশা তপাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। প্রায়ই ঘরে ডেকে তার সহিত প্রীতি-মধুর আলাপ করতেন। নিজ হাতে তাঁর চুল আঁচড়িয়ে তকালীন আরব মহিলাদের মত বেণী বেঁধে দিতেন। তাঁর গর্ভে একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়।। তাঁর নাম ইব্রাহীম।

জন্মের কয়েকদিন পরই হযরত আয়েশা (রাঃ)

তাঁকে আপন ঘরে নিয়ে আসেন এবং পরম আদরে লালন-পালন করেন। বাল্যাবস্থায় এই শিশু পরপারে পাড়ি দেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি আয়েশা (রাঃ)-এর ঘরে ছিলেন।

সতীন-সন্তানদের প্রতি আচরণ হযরত খাদীজাতুল কোবরা (রাঃ) ইন্তেকাল করবার সময় তাঁর চারিজন কন্যা সন্তান দুনিয়ার বুকে রেখে যান। এ চারিজন হচ্ছেন- হযরত যয়নব, হযরত রােকেয়া, হযরত উম্মে কুলসুম ও হযরত ফাতেমা (রাঃ)। হযরত আয়েশার বিবাহের পূর্বেই হযরত যয়নব ও হযরত রােকাইয়ার বিবাহ হয়ে যায়।

পতিগৃহে তিনি মাতহারা হযরত উম্মে কুলসুম ও হযরত ফাতেমাকে পান। বয়সের ক দিয়ে সপত্নী কন্যাগণ সকলেই হযরত আয়েশা অপেক্ষা বড় ছিলেন। বাহিত কন্যাদের মধ্যে হিজরী দ্বিতীয় সনে হযরত রােকাইয়া এন্তেকাল করেন। মত যয়নব ও উম্মে কুলসুম হযরত আয়েশার পতিগৃহে আগমনের ৭/৮ বছর পর পরলােক গমন করেন।

মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করবার সময় হযরত যয়নব শাহাদত সস করেন।

হযরত রােকেয়ার স্বামী ছিলেন হযরত ওসমান (রাঃ)। রােকেয়া ইন্তেকালের পর হযরত আয়েশার প্রচেষ্টায় উম্মে কুলসুমকে তাঁর নিকট বিবাহ দেন। হযরত ওসমান একের পর এক নবী করীম (সাঃ)-এর দুইজন কন্যাকে বিবাহ করেছেন বলে হযরত আয়েশা তাঁকে ‘জিননুরাইন’ বা দুই আলাের অধিকারী বলে আখ্যায়িত করেন। পরবর্তীকালে হযরত ওসমান এই নামেই। প্রসিদ্ধি লাভ করেন।

হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে হযরত ওসমান বর্ণনা করেছেন যে, তিনি যে আন্তরিকতার সাথে আমাকে আতিথেয়তা করতেন তাতে আমি কোন সময়ই আমার শাশুড়ীর অভাব অনুভব করি নাই।।

হযরত যয়নব শারীরিক আকৃতিতে অনেকটা তাঁর মায়ের মত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে খুব স্নেহ করতেন এবং জামাতার বাড়ি হতে এনে নিজের। কাছে রাখতেন। তাঁর চালচলন ও বাচনভঙ্গি দেখে তিনি হযরত খাদীজার স্মৃতি রােমন্থন করতেন। হযরত আয়েশা তাঁকে অতিশয় আদর-যত্ন করতেন।

বয়সে। ছােট হলেও তিনি হযরত আয়েশাকে আপন মায়ের মত শ্রদ্ধা ও ভক্তি করতেন। হযরত যয়নব ইন্তেকালের সময় একটি কন্যা সন্তা রেখে যান। তাঁর নাম ছিল। উমামাহ। নবী করীম (সাঃ) তাকে খুব ভালবাসতেন। তাকে কোলে করে তিনি মসজিদে নামায পড়তে যেতেন। নামায পড়বার সময় সে তার ঘাড়ের উপরে বসে থাকত।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে কিরূপ ভালবাসতেন নিম্নের ঘটনার প্রতি লক্ষ্য করলে তা সহজেই অনুধাবন করা যাবে। একদা সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্র হতে গনীমতের মাল হিসেবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দরবারে এক ছড়া মুক্তার হার আসল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখতে লাগলেন এবং ইরশাদ করলেন, যে আমার অতি প্রিয় ইহা তারই প্রাপ্য। উপস্থিত সাহাবাগণ। মনে ধারণা করেছিলেন যে, এই মুক্তার হার হযরত আয়েশা (রাঃ)-ই পাবেন। হযরত আয়েশাও এই সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি হারছড়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাত হতে তুলে উমামাহর গলায় পরিয়ে দিলেন এবং ইহাই তিনি কামনা করেছিলেন।

ফাতেমা (রাঃ) হযরত আয়েশা অপেক্ষা পাচ বছরের বড় ছিলেন। বড় হলেও সরত আয়েশা তাকে আপন মায়ের তুল্য মনে করতেন। অনেক দিন পর্যন্ত মা ও। ময়ে এক সাথেই থাকেন। দ্বিতীয় হিজরীতে হযরত আলীর সাথে হযরত ফাতেমার বিবাহ ঠিক হলে হযরত আয়েশা বিবাহের যাবতীয় আসবাবপত্র নিজের উপস্থিতিতে ঠিকঠাক করেন। তার ঘরের পার্শ্ববর্তী ঘরই তিনি হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জন্য বাসর ঘর হিসেবে ঠিক করেন।

তিনি বলেন, হযরত ফাতেমার। বিবাহ অপেক্ষা উত্তম বিবাহ আর কারও দেখি নাই। বিবাহের পর ফাতেমা যে। ঘরখানায় থাকতেন তা ছিল হযরত আয়েশার ঘরের সংলগ্ন। মাত্র একটি প্রাচীর উভয় ঘরের মধ্যে অন্তরায় ছিল।

প্রাচীরের জানালার মাধ্যমে তারা প্রয়ােজনবােধে আলাপ করতেন।

হযরত আয়েশা ও হযরত ফাতেমার মধ্যে সম্পর্ক ছিল মধুর। কখনও তাঁদের মধ্যে মনােমালিন্য ঘটে নি। স্বামী গৃহে কাজ করতে করতে ফাতেমা কর্ম ক্লান্ত হয়ে পড়লে তিনি নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট একজন পরিচারিকার জন্য আবেদন করলেন। কোন কারণে তাঁর এই আবেদন পূর্ণ হল না। তাই তাঁর। আবেদন পূরণের সুপারিশ করতে হযরত আয়েশার শরণাপন্ন হন।

হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদিন নবী করীম (সাঃ)-এর দরবারে আমরা (নবী পত্নীগণ) বসে আছি। এমন সময় ফাতেমাকে আমাদের দিকে আসতে দেখলাম। তার চালচলন টিক নবী করীম (সাঃ)-এর মত। কাছে। আসলে তিনি তাঁকে পরম স্নেহে কাছে বসালেন। অতঃপর নবী করীম (সাঃ) তার। কানের কাছে মুখ রেখে কি যেন বললেন। তাঁর কথায় ফাতেমা কাঁদতে। লাগলেন। তার কান্না দেখে হুযুর (সাঃ) পুনসরায় তার কানে কানে কিছু। | বললেন। এবার ফাতেমা হেসে উঠলেন।

তারা বাপ-বেটি কি বলাবলি করলেন- কেন ফাতেমা প্রথমবারের কথায়। কাদলেন আবার কেনই বা দ্বিতীয়বারের কথায় হাসলেন, আমরা কেহই কিছু। বুঝলাম না। তাই আমি ফাতেমার নিকট ব্যাপারটি জানতে চাইলাম কিন্তু "তেমা উত্তর করল, আব্বার গােপন কথা আমি কারও নিকট বলব না।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর আমি একদিন ফাতেমাকে বললাম, "তেমা (রাঃ)! তােমার উপর আমাদের অধিকার আছে, সেই অধিকারের ।

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) । দাবীতে জানতে চাই, ঐ সময় তােমার পিতা এমন কি কথা বলেছিলেন, যার। ফলে তুমি প্রথমবার কেঁদে উঠলে এবং দ্বিতীয়বারের কথায় হাসলে? - হযরত ফাতেমা উত্তর করলেন, “হাঁ, এবার বলতে পারি। তিনি বলেছিলেন। “আমি শীঘ্রই ইন্তেকাল করব।” এই কথা শুনে আমি কেঁদে উঠলাম । আবার। যখন তিনি বললেন, ফাতেমা! তােমার কি পছন্দ নহে যে, তুমি হবে কিয়ামতের। দিন সকল মহিলাদের সর্দার এবং আমার মৃত্যুর পর তােমার সাথেই সবার আগে। আমার সাক্ষাৎ হবে?” এই কথায় আমি আনন্দিত হয়ে হেঁসে উঠলাম।

এই হাদীস দ্বারা ইহাই প্রমাণিত হচ্ছে যে

আয়েশা ফাতেমা অপেক্ষা পাঁচ বছরের ছােট হলেও তিনি মাতৃত্বের দাবীকে কোন সময় আবহেলা করেন নাই। অপরদিকে ফাতেমা আয়েশাকে আপন মায়ের চেয়ে কম মর্যাদা দিতেন না। মা। ও কন্যার মধ্যে যে হৃদ্যতা থাকা দরকার তাই তাঁদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল।

হযরত আয়েশা (রাঃ) সকল কন্যাকেই মনে-প্রাণে ভালবাসতেন। কিন্তু। তবুও যেন হযরত উম্মে কুলসুমের প্রতি তার টান একটু বেশি ছিল। উম্মে । কুলসুমের ইন্তেকালের পর তিনি সােকে আভিভূত হয়ে পড়েন। তাঁর স্মৃতি স্মরণ হলে মাঝে মাঝে আলাপের মাধ্যমে প্রকাশ করে শােকের জ্বালা লাঘব করতেন।


আমাদের কিছু কথা

বাংলায় লিখতে গিয়ে যদি কোনো ধরনের ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

এবং যদি আপনাদের কোন ধরনের সাজেশন থাকে তাহলে অবশ্য আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন

আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ

আমাদের এই পোস্টে ভিজিট করার জন্য

এবং যদি ভালো লাগে এই পোস্টটি তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

Post a Comment

0 Comments