হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) শিক্ষা-দীক্ষা Part 9 - Islamic Life History

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী বই শিক্ষা-দীক্ষা

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) জীবনী শিক্ষা-দীক্ষা - Islamic Life History

ছােলবেলা হতেই বিবি আয়েশার স্মরণশক্তির প্রখরতা ও শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি

এক বিশেষ আসক্তি পরিলক্ষিত হয়
প্রাক-ইসলামিক যুগে আরব দেশের নারী ত দূরের কথা পুরুষেরাও লেখা-পড়া জানত না। নগণ্য সংখ্যা ব্যক্তি নিজ প্রচেষ্টা। ও সাধনার মাধ্যমে যৎকিঞ্চিত লেখা-পড়ার চর্চার করত। তৎকালে কোরাইশ বংশে কেবল মাত্র সতেরজন লােক নামে মাত্র শিক্ষিত ছিল। তন্মধ্যে একজন। ছিলেন মহিলা।

এই বিদূষী মহিলার নাম সাফা বিনতে আবদুল্লাহ আদুবিয়া। ইসলাম প্রচারের পর শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্র কিছুটা প্রশস্ত হয়। যেমন বদর যুদ্ধে বন্দী শিক্ষিতদের জনস্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুকিত্তপণ নির্ধারণ করলেন যে, তারা দশজন মুসলমান বালক-বালিকাকে লেখা-পড়া শিখিয়ে দিবে। ফলে বহু মসলমান বালক-বালিকা শিক্ষিত হতে সমর্থ হয়েছিল।

পিতা হযরত আবুবকর (রাঃ) এবং মাতা উম্মে রুমান-এর সান্নিধ্যে থেকে ছােট বেলা হতেই হযরত আয়েশা লেখা-পড়া শিক্ষার বিশেষ সুযােগ পেয়েছিলেন। তবে তাঁর লেখা-পড়ার পূর্ণ সুযােগ ঘটে রাসূলুল্লাহর সান্নিধ্যে। আসবার পর। কাণ সকল উম্মুল সম্পূর্ণরূপে শিক্ষা-দীক্ষার উপযুক্ত সময়। তাই রাসূলুল্লাহর নিকট হতে তিনি পূর্ণরূপে এই সুযােগ ভােগ করতে সমর্থ হয়েছিলেন।

বিবাহের পূর্বে কোরআন শরীফ যেটুকু অবতীর্ণ হয়েছিল তা তিনি পিত্রালয়েই শিখে নেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সােহবতে আসার পর। কোরআন শরীফ সম্পূর্ণ অবতীর্ণ হয়। হযরত আয়েশা এই সময় কোরআনের চর্চা ও পড়ার কাছে নিজেকে নিয়ােজিত করেন। জোকওয়ান (রাঃ) নামক জনৈক । সাহাবী কর্তৃক লিখিত কোরআন শরীফ হযরত আয়েশা তেলওয়াত করতেন। উক্ত সাহাবী একজন ক্রীতদাস ছিলেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) তাকে মুক্ত করিয়ে স্বীয় আশ্রয়ে রাখেন এবং কোরআন পাঠে সাহায্য নেন।

হযরত আয়েশা (রাঃ) লিখতে পারতেন কিনা এই বিষয়ে মতভেদ রয়েছে

ইমাম বােখারী, ইমাম মুসলিম এবং ইমাম আহমদ হাম্বলের মতে, তিনি সুন্দর লিখতে পারতেন। কিন্তু কোন কোন ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিছের মতে, তিনি। কেবল পড়তে জানতেন, লিখতে পারতেন না। হযরত আবুবকর (রাঃ) ছিলেন।

কোরাইশদের মধ্যে অন্যতম বিদ্বান ও কবি। হযরত আয়েশা (রাঃ) পিতার নিকট বংশ পরিচয় ও নানাবিধ জ্ঞানার্জন ও কবিতা রচনার কলাকৌশল আয়ত্ত। করেছিলেন। সামাজিক আচার-ব্যবহার, আদব-কায়দা, শিষ্টাচার ও ভদ্রতা। ইত্যাদি পিতার নিকট শিক্ষা লাভ করেন।

হযরত আয়েশার শিক্ষা-দীক্ষার আলােচনা করতে হলে কেবল। লেখা-পড়া কথা বললে আলােচনা শেষ হবে না। তার মেধাশক্তি ও ধী-শক্তির আলােচনা করে আমার সামান্যই প্রকাশ করতে পারব। তার জ্ঞানের পরিধি ছিল বিরাট।।
হযরত আয়েশা জ্ঞানার্জনের জন্য বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

কোরআন পাকের নিম্ন আয়াত অবতীর্ণ হবার পর। আল্লাহ পাক কোরআন। শরীফে ঘােষণা করেন, “হে নবী-পত্নীগণ! আপনাদের ঘরে যে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও আল্লাহর আয়াত পাঠ করা হয়, তা আপনারা শিখে নিন। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা। দয়ামায়া ও জ্ঞানবান।। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ)-৫

ধর্মীয় বিষয় শিক্ষার জন্য হযরত আয়েশার সময় ছিল না। সময় পেলে কি নবী করীম (সাঃ)-এর যে বিষয় তাঁর আকাক্ষা জাগে তা জিজ্ঞাসা করে নিতেন। বিশেষ করে তার বাসগৃহ ছিল মসজিদে নববীর সাথে, যেখানে সারাক্ষণ কোন ৯ কোন বিষয়ে আলােচনা চলে। আর তার আপন প্রকোষ্ঠে বসে আলােচিত জ্ঞান-বিজ্ঞান আয়ত্ত করতে কোন ক্লেশ হইত না। কোন কারণে তিনি কোন বিষয় পূর্ণরূপে বুঝতে না পারলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অন্তঃপুরে পবেশ করলে তাঁকে। জিজ্ঞাসা করে ভালভাবে জানি নিতেন। তিনি নিজে শিক্ষা লাভ করে ক্ষান্ত হন।

সপ্তাহের কোন এক নির্দিষ্ট দিনে তিনি অপরাপর মহিলাগণকে শিক্ষা দান। করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আরাে পারদর্শী হয়ে উঠেন। আর এটা ছিল তাঁর। বিশেষত্ব।
তাঁর সবচেয়ে বড় একটি সুবিধা এই ছির যে, তিনি দিনা-রাত্রে কমপক্ষে শরীয়তেরও মারেফাতের বিশটির মত মাসআলা মসজিদে নববীর আলােচনা সভা হতে শিখতে পারতেন।

কোন কোন সময় এমনও দেখা গেছে যে, হযরত আয়েশা আপনার কামরায়। বসিয়া কোরাআন শরীফ তেলাওয়াত করেন অথচ কোন একটি আয়াতের মর্ম উপলব্ধি করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না। খিড়কী পথে তাকায় দেখেন নবীজী। ব্যতীত আর কেহ মসজিদে নাই। তিনি অতি ধীরে পদক্ষেপে অগ্রসর হয়ে ইশারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে কাছে ডাকি আনে ঐ আয়াতের তাৎপর্য বুঝে লতেন। তাঁর। জ্ঞান পিপাসা ছিল সীমাহীন।

কোন সময়ই তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রশ্ন করতে দ্বিধা করতেন না। এমনকি, কোন কোন সময় তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মুখমণ্ডলে মলিনরতা দেখিয়ে উহার কারণ জিজ্ঞাসা না করে কোন মাসআলা অতি স্বাভাবিকভাবে তাকে জিজ্ঞাসা করতে বসতেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার এরূপ অবস্থায় প্রশ্ন করার দরুন কোন সময় বিরক্ত না হয়ে বরং তার জ্ঞান স্পৃহা।

দেখিয়ে সবিশেষ প্রীত হতেন

কোন বিষয় পূর্ণভাবে বুঝতে না পারলে তিনি বার বার জিজ্ঞাসা করে। ভালবাবে জানার পরই প্রশ্ন করা হতে ক্ষান্ত হতেন। ইহা ছিল তাঁর জানার। আগ্রহ।
একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলরেন- যার হিসাব নেয়া হবে সে-ই আজাবে। পতিত হবে।' হযরত আয়েশা প্রশ্ন করলেন-“ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তায়ালা।

সুরা করেছেন-‘তাদের নিকট হতে সহজভাবে হিসাব নেয়া হবে।
নবী করীম) বললেন- যাকে হিসাব-নিকাশের জন্য ডাকা হবে তাকেই বার বার। জিজ্ঞাসা করে ব্যতিব্যস্ত করা হবে।' * হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) একবার কথা প্রসঙ্গে বললেন- কেয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে নারী-পুরুষ সকলেই উলঙ্গ হয়ে উঠবে। হযরত আয়েশা

এই কথা শুনে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ!

নারী-পুরুষ সকলেই একস্থানে দণ্ডায়মান হবে, তখন একে অপরের প্রতি কি দৃষ্টিপাত করবে না? নবী করীম (সাঃ) বললেন- “হে আয়েশা! উহা মহা সঙ্কটের দিন আপনাপন অবস্থা নিয়েই সকলে ব্যস্ত থাকবে। কেহ কারও দিকে তাকাবার মত কথা ভাববারও সময়। তাদের থাকবে না।

একবার হযরত আয়েশা রাসূলাল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন-“ইয়া রাসূলাল্লাহ! হাশরের ময়দানে কেহ কি কাকেও স্মরণ করবে?” নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করলেন- তিন সময় কেহ কাকে স্মরণ করবে না। | প্রথমতঃ হিসাব প্রদানকালে, দ্বিতীয়তঃ আমলনামা প্রদানের সময়, তৃতীয়তঃ দোযখ যখন ভয়ঙ্কর গর্জন করে বলবে- আমি তিন শ্রেণীর পাপীর বান্দার জন্য প্রস্তুত আছি।

এক সময় হযরত আয়েশা নবী করীম (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করে জানতে চাইলেন- যদি কোন মুশরিক কোন সৎকাজ করে তবে আল্লাহর নিকট এর জন্য কোন প্রতিদান পাবে কি? যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে জদআন অন্ধকার যুগে আপনার সহিত অনেক সৎ ব্যবহার করেছে। ইসলাম প্রচারের পূর্বে আরবের কোরাইশদের মধ্যে রক্তপাত বন্ধ করবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে, সেই জন্য সে একটি শান্তি কমিটি স্থাপন করেছিল, আপনিও তার এই শান্তি কমিটিতে যােগদান করেছিলেন।

এই সমুদয় সকাজের প্রতিদান সে পাবে কি না? | রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করলেন-হে আয়েশা! সে কোন প্রতিদানই পাবে না। কারণ সে কোনদিনই আল্লাহতায়ালার নিকট এই প্রার্থনা করে নাই যে, হে আল্লাহ! তুমি আমার পাপসমূহ কেয়ামতের দিন মাফ করে দিও। | একবার রাসূলে করীম (সাঃ) উপদেশ দানকালে এরশাদ করিলেন-তােমরা। পল সময় মধ্যপন্থা অবলম্বন করবে। আল্লাহর মেহেরবানী ও রহমন ব্যতীত নিজ। ' আমল দ্বারা কেহই বেহেশতের অধিকারী হতে পারবে না। ।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর এই বাণীর শেষাংশ শুনিয়ে হযরত আয়েশা (রাঃ)। ভাবলেন, নিশ্চয় নিস্পাপ ব্যক্তিদের বিষয়েই বলা হয়েছে। তাই তিনি। রাসূলুল্লাহর খেদমতে আরজ করলেন-“ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! আপনিও কি। আল্লাহতায়ালার রহমতের প্রত্যাশী, পক্ষান্তরে আপনি নিস্পাপ। নবী করীম উত্তরে বললেন-হে আয়েশা! আমিও আল্লাহর রহমতের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করতেছি। কারণ আল্লাহর রহমত আমাকে ঘিরে না রাখলে আমারও কোন উপায় থাকবে না।

হযরত আয়েশা (রাঃ) চিন্তা করে স্থির করলেন, পুরুষের ন্যায় মহিলাদের উপর জিহাদ অংশ গ্রহণ করা ফরজ। এই বিষয় পরিপূর্ণভাবে অবগত হবার জন্য। তিনি নবী করীমের হুজুরে আরজ করলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! মহিলাদের উপরও। কি জিহাদ ফরজ? নবী করীম (সাঃ) বললেন-“না, মহিলাদের হজ্জ করাই জিহাদের শামিল।

কুমারী পাত্রিগণ বিবাহের সময় লজ্জায় অনুমতি দান না করে নত মস্তকে বসে থাকে অথচ অনুমতি প্রদান বিবাহের একটি অঙ্গ। এই বিষয় হযরত আয়েশা নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট আরজ করলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! বিবাহে সময় তাদের অনুমতি নেয়া আবশ্যক কি না?' নবী করীম (সাঃ) বললেন, তাদের এই চুপই অনুমতি।

হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) কোন কারণে উম্মুল মু'মিনীনগণের উপর মনঃক্ষুন্ন হয়ে একমাস কাল উঠাবসা করবেন না বলে অঙ্গীকার করলেন। তাই তিনি ভিন্ন একটি কামরায় অবস্থান করতে থাকেন। নবী করীম (সাঃ)-এর রাগান্বিতের কারণে উম্মুল মু'মিনীনগণ ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু ইহার প্রতিকার করবারও তাঁদের কোন উপায় ছিল না। তাই সকলেই ভীষণ অন্তর জ্বালায় দ্বগ্ধ হতেছিলেন। ঘটনাক্রমে ঐ মাসটি ছিল উনত্রিশ দিনে।

মাস শেষে নবী করীম (সাঃ) ধীর পদক্ষেপে হযরত আয়েশার ঘরে আসলেন। আয়েশার কক্ষে তাঁর আগমনে খুশী মনে তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়ে মধুর বচনে আলিঙ্গণ করাই সমুচিত ছিল। কিন্তু তিনি তা না করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রশ্ন করে বসলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এক মাসের জন্য ঈলা করলেন। অথচ আহ মাত্র ঊনত্রিশ দিন। নবী করীম (সাঃ) বললেন- হে আয়েশা! আমি এক মাসের কথা বলেছি, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়।

এক ব্যক্তি নবী করীম (সাঃ)-এর সাক্ষাৎ প্রার্থনা করল। নবী করীম (সাঃ) হরত আয়েশা (রাঃ)-কে বললেন, তাকে আসবার অনুমতি দানও। অনুমতি লে লােকটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে খেদমতে আসন গ্রহণ করল। রাসূলুল্লাহ ৫) তার সহিত অতি দ্রভাবে অনেকক্ষণ আলাপ করলেন। কথাবার্তার পর লােকটি চলে গেলে হযরত আয়েশা (রাঃ) আরজ করলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ। (সাঃ)!

আমি জানি আপনি লােকটিকে ভাল জানতেন না। অথচ আপনি আজ তার সহিত বেশ শিষ্টতার সাথে আলাপ করলেন কেন? নবী করীম (সাঃ) প্রত্যুত্তরে বললেন-হে আয়েশা! কোন লােকই মন্দ নয়। মন্দ ঐ ব্যক্তি যে। অপরকে মন্দ ভেবে মেলা-মেশা পরিহার করে? _ কোন রাতে রাসূলে করীম (সাঃ) তাহাজ্জুদ পড়বার পর বেতের না পড়ে শুয়ে পড়লেন। হযরত আয়েশা এটা দেখে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনার বেতের বাকী রয়েছে। নবীজি বললেন, হে আয়েশা! বেতের পড়ব।

স্মরণ রেখােও, আমার চক্ষু দ্ৰিায় ঢলে পড়লেও আমার আত্মা জাগ্রত রয়েছে। | একদা জনৈকা বেদুঈন মহিরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সম্মুখে একটি দুধের পাত্র এনে রাখল। রাসূলে করীম (সাঃ) পাত্রটি হাতে তুলে নিলেন এবং নিজে কিছু পান করে পাত্রটি আবুবকরের দিকে এগিয়ে দিলেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) এই অবস্থা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! দেখিয়াছি, আপনির বেদুঈনদের কোন জিনিস খেতে পছন্দ করতেন না।

অথচ আজ বেদুঈন মহিলা সানবানার দেয়া দুধ পান করলেন কেন? রাসূলে করীম (সাঃ) বললেন, এই মহিলা সকল বেদুঈনের মত নহে। কারণ সে শরীয়তের বিষয় অনেক জ্ঞান। রাখে।
কথিত আছে, একবার কতিপয় ইয়াহুদী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দরবারে এসে পি করে তাঁকে আচ্ছামু আলাইকা (তােমার মৃত্যু হউক) সম্বােধন করল। রাসূলাল্লাহ (সাঃ) জবাবে বললেন-‘অআলাইকুম। আয়েশা ইয়াহুদীদের এহেন বৃষ্টতায় রাগিয়ে গেলেন।

তাই বলে উঠলেন-‘আলাইকুমুচ্ছাম অল লা'নাতু’ অথাৎ তােমাদের প্রতিও মৃত্যু অভিসম্পাত পতিত হউক। হযরত আয়েশা | (আঃ)-এর ক্রোধ দেখিয়ে নবী করীম (সাঃ) শান্তভাবে বললেন, হে আয়েশা!
কল কাজে ও কথায় আমাদের বিনম্র হওয়া আবশ্যক। কেননা বিনম্র ও ভদ্র হওয়া আল্লাহ ভালবাসেন।

কোন এক সময় হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসূলে করীম (সাঃ)-এর সা উটের উপর আরােহণ করে কোথাও বেড়াতে যাচ্ছিলেন। উটিটি সাধারণ we অপেক্ষা একটু বেশি দ্রুত চলতে আরম্ভ করল। যদ্দরুন তিনি বিরক্ত হয়ে আর অন্যান্য মহিলাদের ন্যায় উটটিকে মালউন (অভিশপ্ত) বলে গালি দিলেন। হয়ত আয়েশা (রাঃ)-এর এই উক্তি শুনে নবী করীম (সাঃ) আদেশ কররেন, এই। উটটি ফিরায়ে দাও। কেননা, অভিশপ্ত কোন কিছুই আমাদের সহিত থাকতে পারে না।

একবার হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর কিছু মালপত্র চুরি হয়ে যায়। আপন মালের শােকে হযরত আয়েশা (রাঃ) আরবের প্রথানুযায়ী চোরকে অভিসম্পাত। করতে থাকেন। নবী করীম (সাঃ) আয়েশার এই ব্যবহার দেখিয়ে বললেন, আয়েশা! চোরকে অভিসম্পাত করে তােমার নেক ও তার বদ হালকা করিও না। | একদিন হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর দরজায় এক ভিক্ষুক ভিক্ষা প্রার্থনা করল। হযরত আয়েশা (রাঃ) তার পরিচারিকাকে আদেশ করলেন, ভিক্ষুককে কিছু দান করবার জন্য।

সে সামান্য কিছু দান করে ভিক্ষুককে বিদায় দিল। নবী। করীম (সাঃ) আয়েশা (রাঃ)-এর এই ব্যাপার দেখিয়ে বললেন, ‘আয়েমা! ভিক্ষুককে গণিয়া কখনও ভিক্ষা দিবে না। তা হলে আল্লাহ পাকও তােমকে গণিয়া নেকী দান করবেন; বরং বেশি করে দান কর, তবে আল্লাহ পাকও তােমাকে অধিক নেকী দান করবেন।' | একদা নবী করীম (সাঃ) জনৈক মহিলা বিষয় আলাপ করতেছিলেন। আলােচনা শুনে হযরত আয়েশা বললেন, ‘সে খুব বেঁটে। হযরত আয়েশার এই। উক্তি শুনে রাসূলে করীম (সাঃ) তাঁকে বললেন, হে আয়েমা! ইহা পরনিন্দা

উম্মুল মু'মিনীন হযরত ছুফিয়া রাসূলুল্লাহর অপরাপর মহিষীগণ হতে অপেক্ষাকৃত বেঁটে ছিলেন। কিন্তু রান্না-বান্নায় ছিলেন সকলের চেয়ে উত্তম। পক্ষান্তরে হযরত আয়েমা ছিলেন এই বিষয় অপারদর্শী। একদা নবী করীম তাঁর। রন্ধন কাজের প্রশংসা করতে লাগলেন। হযরত আয়েশা বললেন, আর প্রশংসার প্রয়ােজন নেই।

কেননা, তিনি একজন বেঁটে বই আর কিছুই নন। হযরত আয়েশার এই উক্তি শুনে নবী করীম (সাঃ) বললেন, আয়েশা! কারও ব্যাপারে এরূপ বলা ঠিক নহে। পরনিন্দা অতিশয় তিক্ত জিনিস। তােমার এই কথা সমুদ্রে। ফেলিলে সমুদ্রের পানিকেও তিক্ত করে দিবে। হযরত আয়েমা বললেন, আমি

সত্য কথাই তাে বলেছি।' রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, আমাকে কোন প্রলােভন দেখাও না কেন আমি এরূপ বলতে পারব না।'
একদা রাসূলে করিম (সাঃ) আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করতেছিলেন। আয় আল্লাহ! আমাকে মিসকীন করে রাখ, মিসকীন অবস্থায় আমাকে মৃত্যু দান কর। এবং কেয়ামতের দিন আমাকে মিসকীনদের দলভুক্ত করিও। হযরত আয়েশা বললেন, কেন? নবী করীম (সাঃ) বললেন, ‘মিসকনি ধনীদের অপেক্ষা চল্লিশ দিন পূর্বে বেহেশতে যাবে।

হে আয়েমা! সামান্য একটু খেজুরের টুকরা হলেই মিসকীনকে দান কর। কখনও খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না। তাদেরকে বালবাস এবং নিজ পাশে আশ্রয় দাও।
রাসূলে করীম (সাঃ) একবার হযরত আয়েশার হাতের সােনার কাকন। দেখিয়ে অতি স্নেহভরে বললেন, হে আয়েশা! আমি তােমাকে একটি উত্তম বিষয় বলব কি?' তিনি আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মেহেরবানী করে বলুন। রাসূলে করীম (সাঃ) বললেন, ‘সােনার কাকন পরিহার করে তদস্থলে রূপার।

কাঁকন তৈরি করে জাফরানী রং-এর প্রলেপ দিলে বেশ সুন্দর দেখাবে। ইহা শুনে হযরত আয়েমা বললেন, রূপার উপর কি সােনার রং দিতে পারব না? রাসূলে পাক (সাঃ) তাও নিষেধ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মােট পাঁচটি জিনিস ব্যবহার। করতে হযরত আয়েশাকে বারণ করেছিলেন। যথা

১। স্বর্ণালঙ্কার ২। স্বর্ণের পাত্র ৩। রৌপ্য পাত্র ৪। রেশমী কাপড় ও ৫। লাল রং।
হযরত আয়েশা নবঅ সহচরী হয়ে আসার পর তিনি রাসূলে করীম। (সাঃ)-এর নিকট হতে প্রতিনিয়ত যে সকল জ্ঞান লাভ করেছিলেন তা লিখিয়ে বা পুথিপত্র পাঠ করে অর্জন করা কোন মানবের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তিনি যা বুঝতেন বা বার বার নবী করীম (সাঃ)-কে প্রশ্ন করে তা জেনে নেয়ার স্পৃহা ছিল। তার তীব্র ।

হাদীসে উপরােক্ত উপদেশপূর্ণ অসংখ্য হাদীস বর্ণিত রয়েছে। এসব উপদেশ বাণী হযরত আয়েশা (রাঃ) অতিশয় মনােযােগ সহকারে শুনতেন এবং দৈনন্দিন জীবনে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। এই উপদেশাবলী ও রাসূলে করীমের সােহবতে থাকায় তিনি যে আদর্শ চরিত্রের অধিকারিণী হতে।

পেরেছিলেন তা অতুলনীয়। এখানেই তিনি লাভ করেছেন তার শিক্ষা-দীক্ষার চরম অগ্রগতি ও উন্নতি। যার ফলে ইসলাম জগতে তিনি এক মহান অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।


আমাদের কিছু কথা

বাংলায় লিখতে গিয়ে যদি কোনো ধরনের ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

এবং যদি আপনাদের কোন ধরনের সাজেশন থাকে তাহলে অবশ্য আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন

আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ

আমাদের এই পোস্টে ভিজিট করার জন্য

এবং যদি ভালো লাগে এই পোস্টটি তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

Post a Comment

0 Comments